মুক্তির প্রমানন্দ

মুক্তির প্রমানন্দ

পুণ্যাত্মা উনপঞ্চাশৎ দিবস নির্জনে মুক্তির প্রমানন্দ উপভোগ করিলেন।ঐ সময়ে তপুষ্যু এবং ভল্লিক নামক বণিক দ্বয় নিকটস্থ ভ্ৰমণ করিতে করিতে  তথায় উপস্থিত হইলেন।  শ্রীমান ও শান্তি পূর্ণ শ্রমনকে দেখিয়া তাহারা বুদ্ধের সমীপে গমন পূর্বক তাহাকে অপিষ্টক ও মধুদান করিলেন।  


বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির পর এই প্রথম তিনি আহার গ্রহণ করিলেন।  বুদ্ধ তাহাদিগ কে সম্বোধন করিয়া মুক্তির পথ প্রদর্শন করিলেন।  বণিকদ্বয় মার বিজয়ীর পবিত্রতা উপলব্ধি করিয়া স্ব সম্মানে নত মস্তক হইয়া কহিলেন, “আমরা পুণ্যাত্মা ও তাহার ধর্মে আশ্রয় লইতেছি।” বৈষয়িক লোক দিগের মধ্যে তপুষ্য ও ভল্লি কই বুদ্ধের প্রথম শিষ্যত্ব গ্রহণ করিলেন।


আরো দেখুন: বুদ্ধের ১২টি কর্ম বিপাক


আরো দেখুন: বারাণসীতে ধর্মোপদেশ


আরো দেখুন: বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি

 

মুক্তির প্রমানন্দ

মুক্তির প্রমানন্দ

ব্ৰহ্মার অনুরোধ

বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির পর পুণ্যাত্মার মুখ হইতে এই পবিত্র বাক্য নিঃসৃত হইল: “দ্বেষ হইতে মুক্তি প্রমানন্দ জনক।  বাসনার এবং ‘আমি বিদ্যমান’ এই চিন্তা হইতে উদ্ভুত অহম কারের সংহার প্রমানন্দ জনক! “আমি গভীর তম সত্যের সন্ধান পাইয়াছি।  


ঐ সত্য অতি মহান ও শান্তি দায়ক।  কিন্তু উহার অনুধাবন কঠিন।  কারণ অধিকাংশ মনুষ্যই বৈষয়িক চিন্তায় মগ্ন, তাহারা পার্থিব বাসনা তেই তৃপ্তি লাভ করে।  “সংসারানুরক্ত ব্যক্তি এই ধর্ম অনুধাবন করিবে না, কারণ সে আত্মা অনুসরণে সুখ অন্বেষণ করে।  সত্যের সন্নি ধানে নিজকে সম্পূর্ণ রূপে উৎসর্গ করিয়া যে আনন্দ, সে আনন্দ তাহার নিকট বোধ গম্য নয়। 

 

“বুদ্ধের নিকট যাহা নির্মল তম আনন্দ, উহার নিকট তাহা ত্যাগমাত্র।  বুদ্ধের নিকট যাহা অমরত্ব লাভ, উহার নিকট তাহা ধ্বংস।  বুদ্ধের নিকট যাহা অনন্ত জীবন, উহার নিকট তাহা মৃত্যু।  “বিদ্বেষ ও বাসনা পীড়িত মানুষের নিকট সত্য প্রকাশিত হয় না! বিষয় অনু রক্ত সাধারণ চিত্ত নির্বাণ কে অবোধ্য ও রহস্য ময় মনে করিবে।  


“আমি ধর্ম প্রচার করিলে মনুষ্য যদি তাহা গ্রহণ না করে, তাহা হইলে কেবল মাত্র আমি ক্লান্ত ও ক্লিষ্ট হইব। ” তৎপর ব্রহ্মা সহম্পতি স্বর্গ হইতে অবতরণ পূর্বক পুণ্যাত্মার পূজা করিয়া কহিলেন: “হায়।  মুক্ত পুরুষ তথাগত ধর্মের প্রচার না করিলে পৃথিবী ধ্বংস হইবে।  “যাহারা জীবন সংগ্রামে রত তাহা দিগ কে কৃপা কর, ক্লিষ্টের প্রতি করুণা কর; দুঃখ পাশে একান্ত বদ্ধ প্রাণী সমূহের প্রতি দয়া পর বশ হও। 

 

“এমন প্রাণী আছে যাহা দিগ কে সাংসা রিকতার মলিনতা স্পর্শ করে নাই, তাহা দিগের নিকট যদি এই ধর্ম প্রচারিত না হয়, তাহা হইলে তাহারা বিনষ্ট হইবে, কিন্তু ইহা শ্রবণ করিলে তাহার বিশ্বাস করিয়া রক্ষা পাইবে। ” করুণার আধার পুণ্যাত্মা বুদ্ধের নেত্র সমস্ত সচেতন প্রাণীর উপর দৃষ্টি পাত করিল।  


যাহা দিগের চিত্ত সাংসা রিকতার ধূলিতে ম্লান হয় নাই, যাহারা সুপ্র বৃত্তি সম্পন্ন এবং যাহা দিগকে উপদেশ দেওয়া সহজ সাধ্য, এমন প্রাণী তিনি অবলোকন করিলেন।  বাসনা ও পাপের বিপদ যাহাদের জ্ঞান গোচরে, এরূপ।  কোন কোন জীবও তিনি দেখিলেন।  তদনন্তর পুণ্যাত্মা কহিলেন, “শ্রবণ করি বার জন্য যাহাদের কর্ণ আছে, অমরত্বের দ্বার তাহাদের নিকট উন্মুক্ত হউক।  সবিশ্বাসে তাহারা ধর্ম লাভ অতঃপর ব্রহ্মা সহস্পতি বুঝিলেন যে, পুণ্যাত্মা তাহার অনুরোধ রক্ষা করিয়াছেন।  ধর্ম প্রচারিত হইবে। 

 

ধর্মরাজ্যের প্রতিষ্ঠা

উপক

তদনন্তর মহা পুরুষ চিন্তা করিলেন, “কাহার নিকট সর্ব প্রথম এই ধর্ম প্রচার করিব? আমার পুরাতন শিক্ষকেরা মৃত। তাঁহারা বাচিয়া থাকিলে সানন্দে সুসংবাদ গ্রহণ করিতেন।  কিন্তু আমার পঞ্চ শিষ্য এখনও বর্তমান, আমি তাঁহা দিগের নিকট মুক্তির মার্গ ঘোষণা করিব। ” ঐ সময়ে উক্ত পঞ্চ ভিক্ষু বারাণসী তে মুগ বন নামক উদ্যানে বাস করিতেন।  যে সময়ে তাহা দিগের সহানু ভূতি ও সাহায্য বুদ্ধের নিকট অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হইয়াছিল, সে সময় তাঁহারা যে রূপ নিষ্ঠুর তার সহিত তাহাকে পরি ত্যাগ করিয়া ছিলেন বুদ্ধ দেব সে নিষ্ঠুর তার কথা চিন্তা করিলেন। 

 

তিনি তাহা দিগের নিকট যে উপকার পাইয়া ছিলেন তাহার জন্য কৃতজ্ঞ হইয়া এবং তাহা দিগের অযথা ও বৃথা আত্মনি গ্রহের জন্য কৃপা পর বশ হইয়া তাহা দিগের আবাসে যাত্রা করিলেন।  উপক নামক জৈন ধর্মাবলম্বী এক জন ব্রাহ্মণ যুবক সিদ্ধার্থের পরিচিত ছিলেন।  বারাণসীর পথে সিদ্ধার্থের সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইলে তিনি সিদ্ধার্থের অপুর্ব শ্রী ও নির্মল আনন্দ পূর্ণ মুখ মণ্ডল দেখিয়া কহিলেন, “মিত্র, তোমার মুখ মণ্ডল প্রশান্ত; তোমার উজ্জ্বল চক্ষু দ্বয় পবিত্র তা ও প্রমানন্দ সূচক। ” বুদ্ধ উত্তর করিলেন, “স্বার্থের বিনাশ সাধন করিয়া আমি মুক্ত হইয়াছি। আমার দেহ বিশুদ্ধ, মন বাসনা মুক্ত, আমি সর্বোচ্চ সত্য প্রাপ্ত হইয়াছি। আমি নির্বাণ লাভ করিয়াছি। 

 

সেই কারণেই আমার মুখ মণ্ডল প্রশান্ত ও চক্ষু দ্বয় উজ্জ্বল।  এক্ষণে আমি পৃথিবীতে সত্য রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিতে বাসনা করি।  যাহারা তমসা বৃত তাহা দিগ কে দীপ্ত করিতে ও অমরত্বের দ্বার মনুষের নিকট উন্মুক্ত করিতে বাসনা করি। ” উপক উত্তর করিলেন, “তাহা হইলে তুমি পৃথিবী বিজেতা জীন, তুমি সম্পূর্ণ পুরুষ, তুমি মুর্তি মান পবিত্র তা। ” 


পুণ্যাত্মা কহিলেন, “যাহার আত্ম জয় করিয়াছেন, যাঁহারা আসক্তি বর্জিত তাহারাই জীন।  যাঁহারা চিত্ত সংযত করিয়া পাপ হইতে বিরত, কেবল মাত্র তাহারাই বিজেতা।  অত এব উপক, আমি জীন।” উপক সম্মতি সূচক শির সঞ্চালন করিলেন।  “মাননীয় গৌতম”, তিনি কহিলেন, “ঐ তোমার গন্তব্য পথ। ” তদন্তর পথান্তর অবলম্বন পূর্বক উপক চলিয়া গেলেন।  মুক্তির প্রমানন্দ সমাপ্ত।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url