উরুবিল্ব

 

উরুবিল্ব

বোধিসত্ত্ব অপেক্ষা কৃত শ্রেষ্ঠতর ধর্ম মতের অনুসন্ধান করিতে করিতে উরুবিল্বের অরণ্যে অবস্থিত পঞ্চ ভিক্ষুর উপনিবেশে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।  ভিক্ষু গণ যে রূপ ইন্দ্রিয় নিরোধ ও রিপু সমূহের দমন পূর্বক কঠোর আত্ম সংযম ব্রত উদযাপন করিতে ছিলেন, তাহা দেখিয়া তিনি তাঁহাদের ঐকান্তিকতার প্রশংসা করিয়া তাহাদের দল ভুক্ত হইলেন।


নির্মল উৎসাহে প্রণোদিত হইয়া এবং দৃঢ় সঙ্কল্প লইয়া শাক্য মুনি আত্মনি গ্রহে ও গভীর চিন্তায় রত হইলেন।  তিনি ভিক্ষু গণের অপেক্ষাও কঠোর জীবন যাপন আরম্ভ করিলেন।  ভিক্ষু গণ তাহাকে গুরুর ন্যায় সম্মান করিল।  এই রূপে প্রকৃতির দমন পূর্বক নিজেকে নিগৃহীত করিয়া বোধিসত্ব ছয় বৎসর ধরিয়া সহিষ্ণুতার সহিত এই কঠিন ব্রত পালন করিলেন।  কঠোর তম তাপসিক জীবনের পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া তিনি স্বীয় দেহ ও মন নিয়ন্ত্রিত করিলেন। 


আরো দেখুন: বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি


আরো দেখুন: বোধি সন্ধের অন্বেষণ

 

উরুবিল্ব

উরুবিল্ব

অবশেষে, জন্ম ও মৃত্যুর মহা সমুদ্র পার হইয়া মুক্তির তীরে।  উপনীত হইবার আশায় দিনান্তে মাত্র একটি শস্যকণা তাহার আহার স্থানীয় হইল।  বোধিসত্বের কুঞ্চিত ক্ষীণ দেহ শুক বৃক্ষ শাখার ন্যায় প্রতীয় মান হইল; কিন্তু তাহার পবিত্র তার যশ চতুর্দিকে ব্যাপ্ত হইল এবং দূর দূরান্ত হইতে জন সমূহ আসিয়া তাহার আশীর্বাদ ভিক্ষা করিল।  কিন্তু মহা পুরুষের সন্তুষ্টি সাধন হইল না।  


তিনি সত্য জ্ঞানের অনুসন্ধান করিতে ছিলেন, তাহা পাইলেন না।  পরি শেষে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইলেন যে, আত্মনি গ্রহ বাসনার উন্মুলনে অক্ষম; প্রহর্ষ জনক গভীর ধ্যানে যে জ্ঞান লোক প্রাপ্তি সম্ভব উহা সে আলোক দানে অক্ষম।  জন্ধু বৃক্ষ তলে উপবিষ্ট হইয়া তিনি স্বীয় মানসিক অবস্থা ও আত্মনি গ্রহের।  ফলা ফল আলোচনা করিলেন।  তিনি চিন্তা করিলেন, “আমার দেহ ক্ষীণ।

 

হইতে ক্ষীণ তর হইয়েছে, আমার উপবাস মুক্তির অন্বেষণে আমাকে কিছুই।  সাহায্য করে নাই।  ইহা প্রকৃত মার্গ নহে।  এই মার্গ ত্যাগ করিয়ে আমি পানাহার দ্বারা দেহকে সবল করিয়ে চিত্তের স্থৈর্ষ সাধন করিব।” তিনি স্নান করি বার জন্য নদীতে গমন করিলেন, কিন্তু স্নানান্তে দুর্বলতা বশতঃ জল হইতে উঠিতে পারিলেন না।  তৎপরে একটি বৃক্ষ শাখা অবলম্বন পূর্বক তিনি উঠিয়ে নদী তীর পরি ত্যাগ করিলেন। 


পদ ব্রজে আশ্ৰমাভি মুখে চলিতে চলিতে পুণ্যাত্মার কম্পিত দেহ ভূতলে পতিত হইল।  ভিক্ষু গণ তাহাকে মৃত মনে করিল।  অরণ্যের নিকট একজন পশু পালক বাস করিত, তাহার জ্যেষ্ঠা কন্যার নাম নন্দা। পুণ্যাত্মা যে খানে মুচ্ছিত হইয়ে পড়িয়ে ছিলেন, নন্দা সেই স্থান দিয়ে যাইতে ছিল।  সে তাহার সম্মুখে নতমস্তক হইয়ে তাহাকে অন্ন দান করিল।  তিনি উহা গ্রহণ করিলেন। 

 

আহারান্তে তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সজীব হইল, তাহার চিত্ত তীক্ষ্ণ হইল, তিনি।  সর্বোচ্চ জ্ঞান লাভের উপযুক্ত শক্তি পাইলেন।  এই ঘটনার পর বোধিসত্ত্ব পুনর্বার আহার গ্রহণ করিলেন।  তাঁহার শিয় বর্গ।  নাঘটিত ব্যাপার দেখিয়ে এবং তাহার জীবন যাত্রার নিয়মা বলীর পরিবর্তন অবলোকন করিয়া সন্দেহান্বিত হইল।  


তাহাদের সর্বদা বিশ্বাস হইল যে, সিদ্ধার্থের ধর্মোৎসাহ ক্ষীণ হইতেছে এবং তাহারা যাহাকে গুরুর পদে বরণ। করিয়ে ছিল, তিনি তাহার উচ্চ লক্ষ্য হইতে ভ্রষ্ট হইতেছেন।  ভিক্ষু গণ যখন তাঁহাকে পরি ত্যাগ করিল তখন বোধিসত্ত্ব তাহাদের বিশ্বাসের অভাবের জন্য দুঃখিত হইলেন।  তিনি স্বীয় বাসের নির্জনতা উপলব্ধি করিলেন।  দুঃখ প্রশমিত করিয়ে তিনি একাকী ভ্ৰমণ করিতে লাগিলেন।  শিষ বর্গ কহিল, “সিদ্ধার্থ আমাদিগকে পরি ত্যাগ করিয়ে অপেক্ষা কৃত সুখকর বাস স্থান অন্বেষণ করিতেছেন। ”

 

মার, মুর্ত অশুভ

মহা পুরুষ পবিত্র বোধি বৃক্ষের অভি মুখে পদ চালনা করিলেন।  ঐ বৃক্ষ মূলে তাহার সাফল্য লাভ হইবে।  গমন কালে মেদিনী কম্পিত হইল, অত্যুজ্জ্বল আলোকে জগৎ উদ্ভাসিত হইল।  তিনি উপবেশন করিলে আকাশ আনন্দ ধ্বনিতে পরি পূরিত ও সর্ব প্রাণী হর্য বিশিষ্ট হইল।  এক মাত্র মার, পঞ্চ বাসনা ও মৃত্যুর জনক এবং সত্যের শত্রু  ক্ষুব্ধ হইল। 

 


সে আনন্দিত হইল না।  প্রলুব্ধ কারিণী স্বীয় কন্যায় এবং বহু সংখ্যক দুষ্ট পিশাচ সমভি ব্যাহারে যে স্থানে মহা মণ উপবিষ্ট ছিলেন সেই খানে গমন করিল।  কিন্তু শাক্য মুনির মনো যোগ তাহার দিকে আকৃষ্ট হইল না। মার আস জনক ভীতি প্রদর্শন পূর্বক ঘুর্ণী ঝটিকার সৃষ্টি করিল।  

 

উহাতে আকাশ তমসা বৃত এবং সমুদ্র গর্জন পূর্বক তরঙ্গ বিক্ষো ভিত হইল।  কিন্তু বোধি বৃক্ষ তলে উপবিষ্ট মহা পুরুষ শান্ত রহিলেন, তিনি ভীত হইলেন না।  জ্ঞান দীপ্ত মহা পুরুষ জানিতেন যে তাহার কোন অনিষ্ট হইবে না।  মারের কন্যাত্রয় বোধিসত্ত্ব কে প্রলুব্ধ করিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু তাহারা তাহার মনোযোগ আকর্ষণ করিতে অসমর্থ হইল।


মার যখন দেখিল যে, সে বিজয়ী শ্রমণের হৃদয়ে কোন বাসনার উদ্রেক করিতে পারিল না, তখন সে মহা মুনি কে আক্র মণ পূর্বক ভয়া ভিভূত করি বার জন্য আদেশ বাহী স্বীয় প্রেত গণকে আজ্ঞা দিল।  কিন্তু পুণ্যাত্মা তাহাদিগ কে ক্রীড়া সক্ত নিরীহ বালক বালিকার ন্যায় জ্ঞান করিলেন।  প্রেত গণের প্রচণ্ড বিদ্বেষ কিছুই করিতে সমর্থ হইল না।  

 

নরকের অগ্নি স্বাস্থ্যকর সুগন্ধি বায়ুতে পরিণত হইল, দুরন্ত বজ্রঙ্কুশ পদ্ম পুষ্পের আকার ধারণ করিল।  এই সকল দেখিয়া মার অনুচর বর্গ সমভি ব্যাহারে বোধি বৃক্ষ তল হইতে পলায়ন করিল। 


ঐ সময় আকাশ হইতে স্বর্গীয় পুষ্প বৃষ্টি হইল ও স্বর্গ বাসীদের ধ্বনি শ্রুত হইল, “মহা মুনি কে অবলোকন কর! তাহার চিত্ত দ্বেষ মুক্ত; মারের অনুচর বর্গ তাঁহার ত্রাস উৎপাদনে অসমর্থ হইয়াছে।  তিনি নির্মল ও জ্ঞানী এবং প্রেম ও করুণাময়।  “সূর্য কিরণ যেমন পৃথিবীর অন্ধকার কে গ্রাস করে সেই রূপ অধ্যবসায়ী অনুসন্ধিৎসু সত্যের সন্ধান পাই বেন এবং সত্য তাহাকে জ্ঞান দীপ্ত করিবে।” উরুবিল্ব সমাপ্ত।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url