নৃপতি বুদ্ধের শরণ
নৃপতি বুদ্ধের শরণ
নৃপতি বুদ্ধের শরণ লইয়া পর দিন তাহার নিকট আহার করিবার জন্য বুদ্ধ ও ভিক্ষু সঙ্ঘকে নিমন্ত্রণ করিলেন। প্রাতে বিম্বিসার পুণ্যাত্মার নিকট ভোজনের সময় ঘোষণা করিয়া কহিলেন আপনি আমার মহত্তম অতিথি, হে জগৎপতি, আস্থন, আহার প্রস্তুত। পুণ্যাত্মা স্বীয় পরিচ্ছদ পরিধান পূর্বক ভিক্ষা পাত্র হতে বহু সংখ্যক ভিক্ষু সমভি ব্যাহারে রাজ গৃহ নগরে প্রবেশ করিলেন।
দেবরাজ শক্র তরুণ ব্রাহ্মণের বেশে নিম্নোক্ত গীত গাহিতে গাহিতে
সম্মুখে চলিলেন: যিনি আত্ম দমন শিক্ষা দিয়াছেন তিনি, এবং যাহারা আত্ম সংযম শিক্ষা
করিয়াছেন তাহার, যিনি ভ্রাতা এবং যাহারা, পুণ্যাত্মা এবং যাহারা তাহার নিকট শান্তি
পাইয়াছেন, তাহারা রাজ গৃহ নগরে প্রবেশ করিয়াছেন। স্বাগত, জগৎপতি বুদ্ধ! তাহার নাম ধন্য হউক, তাহাতে
শরণাপন্ন সকলের মঙ্গল হউক।
আরো দেখুন: বুদ্ধের পিতা
আরো দেখুন: রাজ গৃহ নগরে ধর্ম উপদেশ
![]() |
নৃপতি বুদ্ধের শরণ |
ভোজনা বসানে পুণ্যাত্মা ভিক্ষা পাত্র ধৌত করনান্তর হস্ত প্রক্ষালন করিলে নৃপতি তাহার নিকট উপবেশন করিলেন: “পুণ্যাত্মার বাসের জন্য কোখায় এমন স্থান নির্দেশ করি যাহা নগর হইতে বহু দূরবর্তী নয়, যে স্থান গমনা গমনের উপযোগী, তাঁহার দর্শন প্রার্থী ব্যক্তি মাত্রেই যেখানে বিনা অয়াসে গমন ক্ষম হয়, যে স্থান দিবা ভাগে জন সঙ্কুল নয় এবং রাত্রি কালে নীরব, যে স্থান স্বাস্থ্য কর এবং অব সর প্রাপ্ত জীবন উপযোগী? “আমার প্রমোদোদ্বান বেণুবন সর্বতোভাবে উপযুক্ত।
বুদ্ধ যে সঙ্ঘের নেতা ঐ সঙ্ঘ কে আমি এই উদ্যান
উৎসর্গ করিব। ” নৃপতি সজঘকে ঐ উদ্যান উৎসর্গ করিয়া কহিলেন, “আমার প্রার্থনা,
পুণ্যাত্মা এই দান গ্রহণ করুন। ” তদন্তর পুণ্যাত্মা নীরবে সম্মতি জ্ঞাপন পূর্বক ধর্ম
আলোচনা দ্বারা মগধ নৃপতির অন্তঃ করণ আনন্দিত ও উন্নত করিয়া স্বস্থানে প্রত্যাবর্তন
করিলেন।
শারি পুত্র ও মৌদগল্যায়ণ
ঐ সময়ে শারি পুত্র ও মৌদগল্যায়ণ নামক দুই জন ব্রাহ্মণ ছিলেন; তাহারা সঞ্জয়ের শিশ্য বর্গের নেতা ছিলেন এবং ধার্মিক জীবন যাপন করিতেন। তাহারা পরস্পরের নিকট প্রতিজ্ঞা বদ্ধ ছিলেন যে যিনি আগে নির্বাণ লাভ করিবেন তিনি অপরকে তাহা বলিবেন। শারি পুত্র, অত্যুচ্চ আচরণ সম্পন্ন মাননীয় অশ্বজিৎকে ভূমি সংলগ্ন দৃষ্টি হইয়া ভিক্ষায় নিযুক্ত দেখিয়া কহিলেন, এই ভ্রমণ সত্যই যথার্থ মার্গে প্রবেশ করিয়াছেন।
আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিব, কাহার অনুসরণ করিয়া
তিনি সংসার ত্যাগী হইয়াছেন এবং তাহার ধর্ম বিশ্বাস কি? শারি পুত্র কর্তৃক সম্বোধিত
হইয়া অশ্বজিৎ কহিলেন, আমি পুণ্যাত্মা বুদ্ধের অনুসরণ কারী, কিন্তু আমি নব
দীক্ষিত, সুতরাং আমার অনুসৃত ধর্মের সারাংশ মাত্র আপনাকে।
বলিতে পারি। শারিপুত্র
কহিলেন, বলুন, আমি সারাংশই শুনিতে চাই। অতঃপর অজিং কহিলেন, বুদ্ধ কারণ সস্তৃত
সর্ব বস্তুর কারণ নির্ণয় করিয়াছেন, তাহাদের শান্তি লাভের উপায়ও নির্দেশ করিয়াছেন
ইহাই তিনি ঘোষণা করেন। তৎপরে শারিপুত্র মৌদগল্যায়ণের নিকট সমস্ত বিবৃত করিলে
তাহারা উভয়েই বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণের সঙ্কল্প করিলেন। তদনস্তর তাহারা অনুচর বর্গ।
সমভি ব্যাহারে তথাগতের নিকট গিয়া তাহার
শরণ লইলেন। তৎপরে পুণ্যাত্মা কহিলেন, সর্ব
জগতের অধীশ্বরের জ্যেষ্ঠ তনয় যে রূপ পিতার প্রধান অনুচর রূপে শাসন চক্রের প্রবর্তন
করেন, শারি পুত্রও তদ্রুপ।
জন গণের অসন্তুষ্টি
জনগণ বিরক্ত হইল। মগধ রাজ্যের
বহু সন্ত্রান্ত যুবক কে পুণ্যাত্মার নির্দেশা অনুসারে ধার্মিক জীবন যাপন করিতে
দেখিয়া তাহার ক্রুদ্ধ হইল এবং বিরক্তি প্রকাশ করিয়া কহিল, গৌতম শাক্য মুনি
স্বামিগণ কে স্ত্রী পরি ত্যাগে প্রবৃত্ত করাইতেছন, তিনি বংশ লোপ ঘটাই তেছেন। ভিক্ষু
গণকে দেখিয়া তাহারা তাহাদিগ কে ভৎসনা করিয়া কহিল, মহান শাক্য মুনি মনুষ্যের চিত্ত
বশী ভূত করিয়া রাজ গৃহ নগরে আগমন করিয়াছেন।
এই বার তিনি কাহাকে শিষ্য দল ভুক্ত করিবেন? ভিক্ষুগণ এই ঘটনা বুদ্ধের নিকট জ্ঞাপন করিলে তিনি কহিলেন, ভিক্ষু গণ, এই অভি যোগ দীর্ঘ কাল স্থায়ী হইবে না। ইহা সপ্ত দিবস মাত্র স্থায়ী হইবে। যদি জনগণ কর্তৃক তোমরা তিরস্কৃত হও, তাহা হইলে এই কথা বলিয়া তাহাদিগ কে উত্তর দিও: বাহার।
তথাগত, তাঁহারা সত্য প্রচারের দ্বারা মনুষ্য কে চালিত করেন। জ্ঞানী গণের বিরুদ্ধে কে অভি যোগ করিবে? ধার্মিকের নিন্দা কে করিবে? আত্ম সংযম, ন্যায় পরায়তা ও বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ আমাদিগের আচার্যের নির্দেশ। নৃপতি বুদ্ধের শরণ সমাপ্ত