বুদ্ধের পিতা

বুদ্ধের পিতা

বুদ্ধের রাজ গৃহ নগরে অবস্থান কালে পিতা শুদ্ধোদন তাহার নিকট সংবাদ প্রেরণ করিলেন। উহাতে কহিলেন: মৃত্যুর পূর্বে আমি পুত্রকে দেখি বার বাসনা করি।  অপরে তাহার ধর্ম মত।  গ্রহণ করিয়া লাভ বান হইয়াছে, কিন্তু তাঁহার পিতা কিম্বা আত্মীয় স্বজনের সে সুযোগ ঘটে নাই। সংবাদ বাহক কহিল, জগৎ পুজিত তথাগত! মৃণাল যে রূপ সুর্যো দয়ের অপেক্ষা করে, আপনার পিতাও সেরূপ আপনার প্রতীক্ষায় রহিয়া ছেন।  পুণ্যাত্মা পিতার অনুরোধ রক্ষা করিতে সম্মত হইয়া কপিলা বস্তু যাত্রা করিলেন।  অবিলম্বে বুদ্ধের জন্ম ভূমিতে ঘোষিত হইল, রাজ কুমার সিদ্ধার্থ গৃহ ত্যাগ ও সন্ন্যাস আশ্রয় পূর্বক স্বীয় উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিয়া করিয়া প্রত্যা বর্তন করিতে ছেন। 


আরো দেখুন: যশোধরা


আরো দেখুন: নৃপতি বুদ্ধরে শরণ

 

বুদ্ধের পিতা

বুদ্ধের পিতা

শুদ্ধোদন, আত্মীয়গণও মন্ত্রীবর্গ সমভি ব্যাহারে রাজকুমারের অভ্যর্থনার জন্য বহির্গমন করিলেন।  নৃপতি দূর হইতে পুত্র সিন্ধার্থ কে দেখিয়া তাহার সৌন্দর্যে ও মহত্বে চমকিত হইলেন; অন্তরে আনন্দ অনুভব করিয়াও তাঁহার বাক্যর্তি হইল না।  সত্যই তাঁহার পুত্র, ইহা সিদ্ধার্থের অবয়ব। মহান প্রমণ তাঁহার অন্তরের কত নিকটে, তথাপি তাঁহাদের মধ্যে কত ব্যব ধান! মহা মুনি আর তাঁহার পুত্র সিদ্ধার্থ নহেন; তিনি বুদ্ধ, পুণ্য পুরুষ, পবিত্র তার আধার, মূর্ত সত্য, মনুষ্যের শিক্ষক।  নৃপতি শুদ্ধোদন পুত্রের ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শ নার্থ রথ হইতে অবতরণ পূর্বক পুত্র কে অভি বাদন করিয়া কহিলেন, সাত বৎসর তোমাকে দেখি নাই।  

 

পুন দর্শনের তীব্র বাসনা এত দিন হৃদয়ে পুষিয়া আসিতেছি।  বুদ্ধ পিতার সম্মুখে আসন গ্রহণ করিলে, নৃপতি সতৃষ্ণ নয়নে পুত্র কে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন।  পুত্র কে নাম ধরিয়া ডাকিতে তাহার অতিশয় ইচ্ছা হইতে ছিল, কিন্তু তাহার সাহস হইল না।  তিনি নীরবে অন্তরে অন্তরে কহিলেন, সিদ্ধার্থ, বৃদ্ধ পিতার নিকট ফিরিয়া আসিয়া পুনরায় তাহার পুত্র হও।  কিন্তু পুত্রের দৃঢ় সংকল্প দেখিয়া তিনি মনো ভাব দমন করিলেন, নৈরাশ্য তাহাকে অভি ভুত করিল।  এই রূপে পিতা ও পুত্র পরস্পরের সম্মু খীন হইয়া বসিয়া রহিলেন।  নৃপতি দুঃখে আনন্দ এবং আনন্দে দুঃখ অনুভব করিলেন। 

 

পুত্র তাঁহার গৌরব, কিন্তু ঐ মহান পুত্র তাহার উত্তরা অধিকারী হইবে না এই চিন্তায় তাঁহার গৌরব চুর্ণ হইয়া গেল।  আমি আমার রাজ্য তোমাকে দান করিতে প্রস্তুত, নৃপতি কহিলেন, কিন্তু রাজ্যৈশ্বর্য তোমার নিকট ভস্মের ন্যায় বুদ্ধ কহিলেন, আমি জানি নৃপতির হৃদয় স্নেহ পূর্ণ এবং পুত্রের নিমিত্ত তিনি গভীর শোকে আচ্ছন্ন।  কিন্তু যে স্নেহের বন্ধন আপনাকে হৃত পুত্রে বদ্ধ করিয়াছে, ঐ গে সমভাবে সর্ব প্রাণীতে ব্যাপ্ত হইলে আপনি সিদ্ধার্থ অপেক্ষা মহত্তর পুত্র লাভ করিবেন; আপনি বুদ্ধ কে প্রাপ্ত হইবেন যে বুদ্ধ সত্যের শিক্ষক, সদা চারের প্রবর্তক; নির্বাণের শান্তি আপনার অন্তরে প্রবেশ করিবে। 

 

পুত্রের মধুর বাণী শ্রবণ করিয়া শুদ্ধোদন আনন্দে কম্পিত কলেবর হইলেন।  তিনি অপূর্ণ নয়নে যুক্ত করে কহিলেন, অত্যাশ্চর্য পরি বর্তন! দুঃসহ দুঃখে অবসান হইয়াছে।  আমার হৃদয় দুঃখ ভারা আক্রান্ত ছিল কিন্তু এক্ষণে আমি তোমার ত্যাগের ফল ভোগ করিতেছি।  অত্যুচ্চ সহানু ভূতি প্রণোদিত হইয়া রাজ্যৈশ্ব বিসর্জন দিয়া তুমি যে তোমার মহৎ উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিয়াছ, ইহা তোমার উপযুক্ত হইয়াছে।  সত্যের সন্ধান পাইয়া তুমি এক্ষণে মুক্তি প্রয়াসী সর্ব জগতের নিকট অমরত্বের দ্বার উদঘাটন কর।  নৃপতি প্রাসাদে প্রত্যা বর্তন করিলেন, বুদ্ধ নগরের সম্মুখস্থ অরণ্যে অবস্থান করিতে লাগিলেন।  বুদ্ধের পিতা সমাপ্ত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url