বোধিসত্বের জন্ম

 বোধিসত্বের জন্ম

কপিলা বস্তু নগরে এক শাক্য নৃপতি ছিলেন।  তিনি সঙ্কল্পে দৃঢ়, সর্ব জন পূজিত এবং গৌতম নাম ধারী ইক্ষাকুবংশোদ্ভূত।  তাহার নাম শুদ্ধোদন।  তাহার পত্নী মায়া দেবী মৃণালের ন্যায় সুন্দর এবং পদ্মের ন্যায় বিমল চিত্ত শালিনী।  তিনি স্বর্গের রাণীর ন্যায়, পৃথিবীতে বাসনা বর্জিত ও পবিত্র জীবন যাপন করিতেন।  


স্বামী শুদ্ধোদন তাহার পবিত্র জীবন কে সম্মান করিতেন এবং কাল ক্রমে সত্য তাহাতে প্রতি ভাত হইল।  মাতৃত্বের সময় নিকট বর্তী জানিয়া তিনি স্বামী কে স্বীয় জনক জন নীর নিকট তাহাকে প্রেরণ করিতে অনুরোধ করিলেন।  শুদ্ধোদন পত্নী ও ভাবী সন্তানের জন্য উদ্বেগ পর বশ হইয়া রাজ্ঞীর প্রার্থনা পূর্ণ করিলেন।


আরো দেখুন: জীবন বন্ধন


আরো দেখুন: অনাথপিণ্ডিক



বোধিসত্বের জন্ম

বোধিসত্বের জন্ম

লুম্বিনীর উদ্যানের মধ্য দিয়া যাইতে যাইতে সময় উপস্থিত হইল; উচ্চ বৃক্ষ তলে মায়া দেবীর পালঙ্ক স্থাপিত হইল এবং যথা সময়ে উদীয় মান সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল এবং সর্বাঙ্গ সুন্দর সন্তান ভূমিষ্ঠ হইল।  বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড আলোকিত লইল।  


মহা পুরুষের আগত প্রায় মহিমা দেখি বার ঐকান্তিক বাসনায় অন্ধ তাহার দৃষ্টি ফিরিয়া পাইল; মূক ও বধির বুদ্ধের জন্ম সুচনা কারী নিমিত্ত সমূহ সম্বন্ধে পরস্পর বাক্যা লাপ করিল।  কুজ দেহ সরল হইল; খব চলি বার শক্তি পাইল।  বন্দি গণ পৃথল মুক্ত হইল, নরকাগ্নি।  নির্বাপিত হইল।  আকাশ মেঘ মুক্ত ও মলিন জল প্রবাহ নিৰ্মল হইল, বায়ু পথে স্বর্গীয় সংগীত শ্রুত হইল, দেবগণ সহর্ষে আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

 

তাহাদের আনন্দ স্বার্থ জনিত কিম্বা আংশিক নহে, উহা ধর্মের জন্য: কারণ বেদনার সমুদ্রে অভি ভূত সৃষ্টি এইবার মুক্তি পাইবে।  বন্য পশুরা নীরব হইল; সর্ব বিধ হিংস্ৰ প্রাণীর অন্তঃকরণ প্রেমার্দ্র হইল এবং সর্বত্র শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হইল।  এক মাত্র মার, মূর্ত অমঙ্গল, ক্ষুব্ধ হইল। সে আনন্দ প্রকাশ করিল না।  


নাগ রাজ গণ সর্বোত্তম ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ঐকান্তিক বাসনায়, অতীত বুদ্ধ গণকে যে রূপ পূজা করিয়া ছিলেন, সেই রূপ বোধিসত্বের দর্শন কামনায় গমন করিলেন।  তাঁহারা বোধিসত্বের সম্মুখে মন্দার পুষ্প নিক্ষেপ পূর্বক ধর্ম ভক্তি প্রদর্শন করিয়া আন্তরিক আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

 

পিতা নিপৃতি শুদ্ধোদন এই সমস্ত লক্ষণাদি দেখিয়া ক্ষণেকে আনন্দে আপ্লুত এবং ক্ষণেকে সাতিশয় ক্লিষ্ট হইলেন।  রাজ্ঞী পুত্র ও পুত্রের জন্ম জনিত কোলা হল দেখিয়া স্বীয় নারী হৃদয়ে সংশয় অনুভব করিলেন।  তাহার পালঙ্কের পার্শ্বে এক বৃদ্ধ দাড়াইয়া সন্তান কে আশীর্বাদ করি বার জন্য ভগবানের নিকট প্রার্থনা করিতে ছিল। 


ঐ সময় নিকটস্থ অরণ্যে অসিত নামক এক জন ঋষি সন্ন্যাসীর জীবন যাপন।  করিতে ছিলেন তিনি ব্রাহ্মণ ও তাহার মুখ মণ্ডল মহত্ব জ্ঞাপক; জ্ঞান ও বিদ্যায় তাঁহার যে রূপ খ্যাতি ছিল, সেই রূপ লক্ষণ সমূহের শুভা শুভ ফল গণনায় পার দর্শিতার জন্যও তিনি খ্যাত ছিলেন।  ঐ ঋষি রাজ পুত্রকে দেখিয়া অশ্রু পাত এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিলেন।

 

ঋষি কে অশ্রু পাত করিতে দেখিয়া রাজা ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার পুত্রকে দেখিয়া আপনি কেন দুঃখ ও বেদনা অনুভব করিলেন?” কিন্তু অসিতের অন্তঃকরণ আনন্দ মগ্ন ছিল।  রাজার মনের সংশয় অবগত হইয়া তাহাকে সম্বোধন করিয়া ঋষি কহিলেন: “পূর্ণাবয়ব চন্দ্রের ন্যায় নৃপতি মহৎ আনন্দ অনুভব করুন, কারণ তিনি মহা পুরুষের জন্ম দাতা।  


“আমি ব্রহ্মের উপাসনা করি না, কিন্তু এই শিশুকে পূজা করি; দেবগণ মন্দিরস্থ আপন হইতে অবতরণ করিয়া ইহার পূজা করিবে।  “সমুদয় উদ্বেগ ও সংশয় দূর করুন।  যে সমুদয় আধ্যাত্মিক নিমিত্ত একটিত হইয়াছে তাহারা সূচনা করিতেছে যে, এই শিশু বিশ্বের মুক্তি দাতা হইবে। 

 

“আমার বার্ধক্য স্মরণ করিয়া আমি অস্ত্র সম্বরণ করিতে পারিনাই; কারণ আমার শেষসময় নিকট বর্তী।  কিন্তু আপনার এইপুত্র পৃথিবী শাসন করিবে।  সমস্ত প্রাণীর মঙ্গলের জন্য তাহার জন্ম।  “তাহার বিমল শিক্ষা সমুদ্রে নষ্ট পোত নাবিকের আশ্রয় দাত্রী তীর ভূমির ন্যায় হইবে। 


তাহার ধ্যানের ক্ষমতা শান্ত জলা শয়ের ন্যায় হইবে; এবং কামনা রূপ অনা বৃষ্টিতে দগ্ধ প্রাণীগণ স্বেচ্ছায় তথা হইতে জল পান করিবে।  “লোভাগ্নির উপর ইহার করুণার মেঘ উদিত হইয়া ধর্ম বৃষ্টিতে ঐ অগ্নি নির্বাপিত করিবে।  “নৈরাশ্যের দুরন্ত আর উদঘাটিত হইয়া নির্বুদ্ধিতা ও অবিদ্যার স্বেচ্ছা কৃত জালে আবদ্ধ প্রাণী গণকে মুক্ত করিবে।

 

“দীন, দুঃখী ও অসহায় কে দাসত্বের শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করি বার জন্য ধর্ম রাজ অবতীর্ণ হইয়াছেন।” রাজা ও রাজী অসিতের বাক্য শ্রবণ করিয়া আনন্দে অভি ভূত হইলেন এবং নব জাত সন্তানের নাম সিদ্ধার্থ (যিনি স্বীয় উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিয়াছেন) রাখিলেন।  তদনন্তর রাজী তাহার সহোদরা।  প্রজা পতিকে কহিলেন, “যে মাতা ভবিষ্যৎ বুদ্ধ কে গর্ভে ধারণ করিয়াছেন, তিনি কখনও অন্য সন্তান প্রসব করিবেন না। 


আমি অবি লম্বে এই পৃথিবী, স্বামী ও সন্তান সিদ্ধার্থ কে ত্যাগ করিয়া যাইব।  আমার মৃত্যুর পর তুমি সিদ্ধার্থের মাতা হইও।” প্রজা পতি সাশ্রু নয়নে অঙ্গীকার করিলেন।  রাজ্ঞীর লোকান্তর গমনের পর প্রজা পতি সিদ্ধার্থ কে পালন করিতে লাগিলেন।  চন্দ্রের কলা যে রূপ ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি লাভ করে, সেই রূপ রাজ পুত্রও দিনে দিনে দৈহিক ও মানসিক উন্নতি লাভ করিতে লাগিলেন।  সত্য বাদিতা ও করুণা তাঁহার হৃদয়ে আশ্রয় লইয়া ছিল।  বোধিসত্বের জন্ম সমাপ্ত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url