হেম বত্ত সূত্র
হেম বত্ত সূত্র
০২। হেম বত্ত যক্ষ বললেন ‘তিনি কি সকল প্রাণীর প্রতি দয়া চিত্ত সম্পন্ন? সুখ দুঃখে তার চিত্ত কি সংকল্প বশী ভূত?
আরো দেখুন: অনাথপিণ্ডিক
আরো দেখুন: দেবদূত সূত্র
![]() |
হেম বত্ত সূত্র |
০৩। সাত গিরি যক্ষ বললেন যে তিনি সকল প্রাণীর প্রতি দয়া চিত্ত সম্পন্ন, এবং সুখ ও দুঃখে তার চিত্ত সংকল্প বশী ভূত।
০৪। হেম বত্ত যক্ষ বললেন ‘যা দেওয়া হয় নি (অর্থাৎ
অদত্ত বস্তু) তিনি কি তা গ্রহণ করেন? প্রাণীদের প্রতি তিনি কি সংযত ভাব রাখেন?
তিনি কি প্রমত্ততা থেকে দূরে অবস্থান করেন? তিনি কি ধ্যান চ্যুত হন না?’
০৫। সাত গিরি যক্ষ বললেন “যা দেওয়া হয়নি, তিনি তা
গ্রহণ করেন না। প্রাণীদের প্রতি তিনি আত্ম সংযত, প্রমাদ হতে তিনি দূরে অবস্থান করে
এবং তিনি সমাধি সংযুক্ত বুদ্ধ।”
০৬। হেম বত্ত যক্ষ বললেন ‘তিনি কি মিথ্যা ভাষণ করেন
না? তিনি কি সঠিক? অপরকে তিনি কি নিন্দা করেন না? সপ্রলাপ বাক্য কি তিনি ভাষণ করেন
না?
০৭। সাত গিরি যক্ষ বললেন ‘তিনি মিথ্যা বললেন না,
তিনি কর্ম মুক্ত, অপরকে তিনি নিন্দা করেন না, সম্প্রলাপ বাক্যও তিনি বলেন না এবং
তিনি ভেবে চিন্তে অর্থ পূর্ণ। বাক্য ভাষণ
করেন।’
০৮। হেম বত্ত যক্ষ বললেন ‘তিনি কাম সুখ ত্যাগ করেছেন
কি? তার চিত্ত অনাবিল পবিত্র কি? তিনি কি অজ্ঞানতা মুক্ত? ধর্ম সমূহে কি তিনি
চক্ষুস্মান?
০৯। সাত গিরি যক্ষ বললেন ‘তিনি কাম ভাগে আসক্ত নহে। তার মন পবিত্র, তিনি। সকল অজ্ঞানতা অতি ক্রম করেছেন। বুদ্ধ সংস্কার ধর্ম সমূহে চক্ষুস্মান।’
১০। হেম বত্ত যক্ষ বললেন ‘তিনি কি বিদ্যাচরণ সম্পন্ন?
তিনি কি শুদ্ধা চরণ কারী? তার আসব সমূহ কি ক্ষয় প্রাপ্ত হয়েছে? তার কি পুনর্জন্ম
নাই?’
১১। সাত গিরি যক্ষ বললেন ‘তিনি বিদ্যাচরণ সম্পন্ন
শুদ্ধা চরণ কারী তার সকল আসক্ষীণ এবং তাঁর পুনর্জন্ম বা পুনর্ভাব নাই।
১২।
‘মুনি করণীয় কর্ম সম্পাদন করে চিত্তের পূর্ণ তা সাধন করেছেন, এবং তিনি বিদ্যাচরণ
সম্পন্ন, তার ধর্ম কেই আমরা প্রশংসা করি। ’
১৩। ‘মুনি করণীয় কর্ম সম্পাদন করে চিত্তের পূর্ণ
সাধন করেছেন, তিনি বিদ্যাচরণ সম্পন্ন, তার ধর্ম কেই আমরা অনুমোদন করি। ’
১৪।
‘মুনি করণীয় কর্ম সম্পাদন করে চিত্তের পূর্ণতা সাধন করেছেন। চল সে বিদ্যাচরণ সম্পন্ন গৌতম কে আমরা দেখব। ’
১৫।
‘হরিণের ন্যায় তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, কৃশ, বীর, অল্পা হারী, আলো লুপ বনে
ধ্যান রত মুনি সে গৌতম কে এস আমরা দর্শন করব। ’
১৬। ‘ভোগ পরি ত্যাগী সিংহের ন্যায় কাম ভোগে অনাসক্ত
এক চুর নাগ বা বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে আমরা জিজ্ঞাসা করব মার বন্ধন হতে কী ভাবে
মুক্ত হওয়া যায়। ’
১৭। ধর্ম দেশক,
কথন কারী সকল ধর্ম সমূহে পারদর্শী শত্রু ভয়াতীত,
সে গৌতম বুদ্ধ কে আমরা জিজ্ঞাসা করব।
১৮। হেম বত্ত
যক্ষ বললেন ‘কী ভাবে জগতের উৎপত্তি হল? কার সাথে ইহার ঘনিষ্ট সম্পর্ক? ইহা কার
সাথে আসক্ত হয়ে দুঃখ প্রাপ্ত হয়। ’
১৯। ভগবান হেম বত্ত
কে বললেন ওহে হেম বত্ত ছয়টি বিষয়ের সাহায্যে জগতের উৎপত্তি, ইহার সাথে ছয়টি বিষয়ের
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ছয় প্রকার উপাদান
বিষয়ে আসক্ত হয়ে হয় প্রকার বিষয়ের দ্বারা উহা দুঃখ প্রাপ্ত হয়।
২০। জগতের কষ্ট
দায়ক উপাদান কী? কী ভাবে মুক্তি লাভ করা যায়? তা জিজ্ঞাসা করছি, ভগবান তা প্রকাশ
করুন।
২১। জগতে কাম
গুণ পাঁচ প্রকার, ইহাদের সাথে মন ষষ্ঠ রূপে বিদিত। মানুষ এ গুণ সমূহে বীত রাগ হয়ে
দুঃখ হতে মুক্তি লাভ করে থাকেন।
২২। ‘এ জগতের মুক্তি প্রদান কারী উপায় তোমাদের নিকট যথা
যথ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এভাবেই দুঃখ হতে
মুক্তি লাভ করা যায় বলে আমি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করছি। ’
২৩। এ জগতে কে
ওঘ (তৃষ্ণা স্রোত) উত্তীর্ণ হন? কে অর্ণব (তৃষ্ণা সাগর) অতি ক্রম করতে সমর্থ হন?
অপ্রতিষ্ঠিত ও অবলম্বন হীন হয়ে কে তৃষ্ণা সাগরের গভীরে ডুবে যান না?
২৪। “যিনি
সর্বদা শীল সম্পন্ন প্রজ্ঞা বান সুসমাহিত, আধ্যাত্মিক চিন্তা কারী স্মৃতি মান,
তিনি দুরতি ক্রম্য তৃষ্ণা স্রোত অতি ক্রম করেন। ’
২৫। “যিনি কাম
সংজ্ঞা হতে বিরত সকল সংযোজন মুক্ত তিনি তৃষ্ণা সাগরে ডুবে যান না। ’
২৬। “তোমরা
গম্ভীর প্রজ্ঞা বান, অর্থ দর্শনে নিপুণ কাম জগতে পুনর্জন্মে আসক্তি রহিত, সর্বদা
সর্বত বিমুক্ত, দিব্য পথে বিচরণ কারী সে মহা জ্ঞানী কে দর্শন কর। ’
২৭। “অতুল নীয়
সুনাম লদ্ধ, দক্ষ অর্থ দর্শী প্রজ্ঞা দাতা, কাম লোকে অনাসক্ত সর্ব সুমেধ আর্য পথে
বিচরণ কারী সে মহা জ্ঞানী কে দর্শন কর। ’
২৮। আজ আমাদের
শুভ দর্শন লাভ হল, আমাদের আজ সুপ্রভাত ও শুভ প্রত্যুত্থান হল। কারণ তৃষ্ণা স্রোত অতি ক্রম কারী আসব মুক্ত
সম্যক সম্বুদ্ধ কে আমরা দেখতে পেলাম।
২৯। ঋদ্ধি শক্তি
সম্পন্ন বিখ্যাত এ দশ হাজার যক্ষ সবাই আপনার শরণা শ্রয় গ্রহণ করল। আপনি আমাদের অনুত্তর শাস্তা।
৩০। সমুদ্ধ এবং
ধর্মের উত্তম আচার নীতি কে সম্মান সৎকার করতে করতে আমরা গ্রাম হতে গ্রামান্তরে এবং
পর্বত হতে পর্বতান্তরে বিচরণ করব। হেম বত্ত সূত্র সমাপ্ত।