সুপ্রিয়া

 সুপ্রিয়া

‘সুপ্রিয়া’ মা বাপেরই দেয়া নাম।  অনিন্দ্য সুন্দরী ছোট একটি বালিকা। চাঁপা ফুলের মতো গায়ের রং।  শিশির সিক্ত কুন্দ কলিটির মতো সাদা ধবধবে লাবণি মাখা সুন্দর  মুখ খানি।  বালি কাকে দেখে মনের আশ মেটে না। 


আরো দেখুন: পটাচারা জীবনী


আরো দেখুন: ত্রিশরণা পন্ন



সুপ্রিয়া

সুপ্রিয়া

সুপ্রিয়া মাতা পিতার খুবই আদরিণী দুহিতা।  তার পিতা বারাণসীর এক জন ধনাট্য ও স্বনাম ধন্য ব্যক্তি।  কিন্তু ধনের চেয়েও অধিকতর তৃপ্তিতে তাঁদের বুক ভরে উঠেছে অমন কন্যারত্ব লাভ করে।  মাতৃত্বের ও পিতৃত্বের গৌরবে জনক জননী গৌরবান্বিত।  মেয়েটি তাদের যেন আনন্দ নির্ঝরিনী।  

 

সুপ্রিয়া বড় পুণ্যবতী।  তা বোঝা যায় প্রভাত কালীন আকাশের মতো তার জীবন প্রভাতের দিক থেকে বিচার করলে।  সে মাতৃ গর্ভে আবির্ভাবের পর থেকেই মাতা পিতার সৌভাগ্যোদয হয়েছিলো।  সব চেয়ে সুখের বিষয় তাঁদের সুস্থতা ও নীরো গতা।  মেয়েটির শুভা গমনে মাতা পিতা উভয়েই নর নারী নির্বি শেষে সকলের সুহৃদ ও প্রিয় হয়ে ওঠেন, তাই তারা প্রাণাধিকা দুই হিতার নাম রাখলেন ‘সুপ্রিয়া’

 

মাধুর্যময়ী এ ছোট বালিকা টিকে দেখলে দেবী প্রতিমা বলে ভ্রম হয়।  এমন সুগঠিত অঙ্গ সৌষ্ঠব, এমন স্নিগ্ধোজ্জ্বল শোভন মোহন নয়ন যুগল সচরাচর মানবীতে সম্ভব না।  স্নেহ ও কারুণ্যে ভরা হাস্যোদ্দীপ্ত আননে যেন স্বর্গের শান্তি আভাসিত।  কোন দেব বালা যেন দেব পুরের পথ ভুলে মর্তপুরে নেমে এসেছে।

 

এ মেয়ে টির প্রতি মাতা পিতার স্নেহ যত্নের অন্ত নেই।  এমন সুখের মধ্য দিয়ে সে এখন অষ্টম বর্ষে পদার্পণ করেছে।  তার অন্তর যেমন কোমল, স্বভাবও তেমন মধুর।  আর্তের আর্তনাদে তার হৃদয় হয় দ্রবীভূত, কারণ্য হস্তে মুছিয়ে দেয় ব্যথিতের ব্যথার অশ্রু, রুগ্নের সেবায় ঢেলে দেয় মন প্রাণ।  ‘পর দুঃখ কাতরতা’ এ বৈশিষ্ট্যই তাকে কালে মহীয়সী করে তুলেছিল।

 

বারাণসী নগরীতে মহোৎ সবের সাড়া পড়েছে।  ভগবান গৌতম বুদ্ধ ধর্মামৃত পরিবেশন মানসে এ পুণ ভূমিতে পদার্পণ করবেন।  ধ্বজা পতাকা ও পত্র পুষ্পে সমগ্র নগরী মনোরম শোভা ধারণ করেছে। তথাগতের জয় স্তোত্রে আকাশ বাতাস মুখরিত।

 

এ উৎসবের আয়োজন দেখে সুপ্রিয়ার বালিকা হৃদয় আনন্দে নেচে উঠল।  বুদ্ধ দর্শনের উদগ্র বাসনা তাকে আকুল করে তুলল।  তার বুদ্ধ ভক্ত পিতা ও ভক্তি মতী মাতার মুখে সে বহু বারই শুনেছে সমুদ্ধের অতুলনীয় মহিমার কথা।  শুনতে শুনতে কখনও বা তন্ময় হয়ে গেছে, কখনও বা বুদ্ধের অসীম মহিমার মধ্যে আপনাকে হারিয়ে ফেলেছে, আর কখনো বা আপনা থেকেই বুদ্ধের উদ্দেশ্যে ভক্তি নতি নিবেদন করেছে।  কিন্তু, স্বচক্ষে তাকে নয়ন ভরে দেখা এ পর্যন্ত তার ভাগ্যে ঘটেনি।  আজ পূর্ণতা লাভ করবে তার আশা, তাদেরি গ্রামে আজ স্বাগত হবেন লোকনাথ বুদ্ধ।  আজই তাঁর দর্শন মিলবে, অদর্শন পূর্ব চির আরাধ্যের, দেখা পাবে সে চির বাঞ্ছিত রত্নের, তাই উৎসাহের অন্ত নেই সুপ্রিয়ার, আনন্দের সীমা নেই।

 

ভগবান অমিতাভ সশিষ্য আনন্দ মুখর বারাণসীতে সমাগত হলেন।  আজ পুণ্যক্ষ’ণে সুপ্রিয়ার মানস প্রভুর মঙ্গল বোধন হলো, তার প্রসন্ন ভাগ্যে সম্যক সমুদ্ধের দর্শন লাভ ঘটলো।  সে পুণ্য পুরুষকে প্রাণ খুলে দেখলো যুগপৎ হর্ষ ও বিস্ময়ে।  এ দেখার আগ্রহ আছে শেষ নেই, আকাঙ্খ আছে  বিরাগ নেই।

 

“এমনটি তো আর চোখে পড়েনি! এমন অপূর্ব মধুর রূপশ্রী, এমন পুণ্য লক্ষণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, এমন সুন্দর সুনীল অক্ষি যুগল, এমন ইন্দ্র ধনু ভ্রুযুগল, সুগঠিত এমন নাসিকা, এমন মুক্তা শুভ্র দন্তরাজি, এমন ষড়রশ্মি দীপ্ত ব্রহ্মচারী, এমন সোনার কান্তি পুরুষ, এমন প্রশান্ত সৌম্য মূর্তি, এমন মধুর স্বর লহরী, জীবনে আর তো কখনো দেখিনি, কখনো শুনিনি!” সে নির্বাক বিস্ময়ে দেখছে, আর এসব চিন্তা করছে।  পুণ্য পুরুষ তথাগতের এ অসাধারণত্ব তার অন্তরে জাগিযে তুলল পুলক শিহরণ।

 

সর্বজ্ঞ বুদ্ধ বুঝলেন বালিকা সুপ্রিয়ার মনের কথা।  তিনি ধর্ম দেশনা করলেন এ ছোট বালিকার মনের মতো করে, তার মনের ক্ষুধার যথোচিত অমৃত পরিবেশন করলেন নিয়ামক শান্তা।  মুনীন্দ্রের করণা, মুক্তি মন্ত্রের পীয়ুষধরা বালিকার মর্মস্থল স্পর্শ করল গভীর ভাবে।  সার্থক হলো সমুদ্ধের দেশনা।  বালিকা উপভোগ করল অমৃতের আস্বাদ। তৃপ্ত হলো তার তৃষিত অন্তর, অনুভব করল অনির্বচনীয় শান্তি।  কি এক অব্যক্ত আনন্দের অভিব্যক্তি তাকে স্রোতের মুখে ভাসিয়ে নিয়ে চলল। সম্প্রাপ্ত হলো নির্বাণের প্রথম স্তর।  কি সৌভাগ্য সুপ্রিয়ার, সাক্ষাৎ করলেন তিনি স্রোতাপ্রত্তি ফল।  

 

সুপ্রিয়া অষ্টম বর্ষের বালিকা হলে কি হবে, তার অন্তরে নিহিত রয়েছে বহু জন্মের পুঞ্জী ভূত পুণ্য সংস্কার রূপ মহা শক্তি।  যার ফলে আজ তিনি এ বালিকা বয়েসে উপলব্ধি করলেন চতুরার্য সত্য নৈবাণিক ধর্মের নিগূঢ়তত্ত্ব।

 

আজ অফুরন্ত আনন্দ, অন বদ্য প্রীতি কে যে তাঁর কোমল প্রাণে জাগিয়ে দিচ্ছে, তা তিনি নিজেও ভেবে পান না।  তিনি যে বড়ো ভাগ্যবতী, পুণ্য বতী, পুণ্য ক্ষণেই ভগবান বুদ্ধের দর্শন পেয়েছেন, একথা স্মরণ হতেই আনন্দা তিশয্যে সম্বুদ্ধের চরণ প্রান্তে লুটিয়ে পড়ে বললেন “ভগবান, আপনি অনন্ত গুণের আধার, আপনি স্নিগ্ধ শান্তির নির্ঝর। ”

 

কর্মের আশ্চর্য বিধান।  শোভন কর্মের বিপাক ও শোভন, সুখময ও শান্তিময়।  তা হয় অচিন্তনীয় ও ঋদ্ধি ময়।  আট বৎসরের বালিকা আজ স্রোতাপন্না।  গোলাপের মধুর গন্ধ মুকুলের মধ্যে সম্পূর্ণ বিকাশ লাভ না করলেও নিহিত থাকে।  সুপ্রিয়া আজ যে স্রোতে পড়েছেন, এ স্রোতস্বিনীর স্রোতে ভাটা পড়ে না; এ স্রোত উজান গাঙের মতোই তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

 

অনাবিল প্রত্যক্ষ জ্ঞানে তিনি বুঝতে পারলেন জগতে শান্তি প্রদ মুক্তি প্রদ বলে শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করবার যদি কেউ থাকেন, তবে তিনি সর্ব বৃদ্ধ, তারই প্রচারিত সত্য ধর্ম এবং নীতি অনুযায়ী ভিক্ষু সংঘ।  তাই তাঁর পবিত্র কোমল অন্তরে তিনি রচনা করে রাখলেন ত্রিরত্নের জন্য সর্বোচ্চ আসন।  তাঁর দৃঢ় সংকল্প জীবন দিয়েও অক্ষুন্ন রাখবেন এ পবিত্র আসনের মর্যাদা।  এ সময় সংকল্পের সার্থকতা সম্পাদনে দান, শীলকে গ্রহণ করলেন জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্রতরূপে।  বুদ্ধ ও ভিক্ষু সংঘের সেবায় উৎসর্গ করবেন তাঁর জীবন।  এতেই তাঁর সুখ, এতেই তাঁর শান্তি।

 

আট বৎসর পরের কথা।  কুমারী সুপ্রিয়া তাঁর যৌবনের অনুপম মাধুর্যে পরি পূর্ণ হয়ে ষোড়শ বর্ষে পদা র্পণ করেছেন।  তাঁর স্নিগ্ধোজ্জ্বল মুখ খানি লাবণ্যে ভরে উঠেছে, কারুণ্যেও হয়েছে ভর পুর।  এ পুণ্যময়ী নারীর রূপ গুণের কথা সমগ্র বারাণসীতে প্রকাশ হয়ে পড়ল।  নানা স্থানের ধনাঢ্য পরিবার থেকে তার বিবাহ সম্বন্ধ আসতে লাগল।  কিন্তু, মাতা পিতার ইচ্ছা তাঁদের প্রাণসমা কন্যাকে এক সুপাত্রের হস্তেই সমর্পণ করবেন।

 

পাত্র সুপ্রিয় শ্রাবস্তীর এক বিত্তশালী পরিবারের সন্তান।  সুপ্রিয় সুদর্শন যুবক, বলিষ্ঠ গঠন, শিক্ষিত ও অমায়িক।  এমন সর্ব গুণসম্পন্ন যুবক সচরাচর দেখা যায় না।  পাত্রের আর একটা বিশেষ গুণ হলো ত্রিরত্নে অবিচল নিষ্ঠা ও ধর্ম প্রাণতা।  যথা সময়ে শুভ পরিণয় সম্পন্ন হয়ে গেল। বরকন্যার গুরু জন বর্গ এ মিলনে আনন্দিত হলেন এবং নব দম্পতির কল্যাণ কামনা করলেন।  সুপ্রিয়ার সঙ্গে সুপ্রিয়ের হলো মধুর মিলন, উভয়েই অনুভব করলেন অসীম তৃপ্তি।  উপযুক্ত স্বামী লাভ করে সুপ্রিয়া মনে করলেন।  তাঁর নারী জীবন সার্থকতার গৌরব মর্যাদায ভরে উঠেছে।  আর সুপ্রিয় তিনি পেয়েছেন তাঁর মানসী প্রিয়াকে।  সর্ব গুণ মন্ডিতা অনিন্দ্য সুন্দরী সুপ্রিয়া তার সহ ধর্মিনী, জীবন পথের সঙ্গিনী। তাই আনন্দে হয়েছে তার অন্তর পরি পূর্ণ।

 

স্রোতাপন্না সুপ্রিয়া সব চেয়ে অধিক শান্তি ও প্রীতি লাভ করলেন স্বামীর ভক্তি শ্রদ্ধা দেখে।  এটাই তাঁর পক্ষে পরম লাভ বলে মনে হলো।  এর ফলে স্বামী স্ত্রী উভয়েই হলেন সংঘের দায়ক দায়িকা, সেবক সেবিকা।  তাদের গার্হস্থ্য জীবনের ব্রত স্বরূপ নিত্য নৈমিত্তিক কাজের মধ্যে গণ্য হল প্রতিদিন বিহারে গমন ও ধর্ম শ্রবণ, নিয়মিত ভিক্ষু দর্শন ও তাঁদের অভাব পূর্ণ করণ।

 

একদিন সুপ্রিয়া ভগবান বুদ্ধের নিকট ধর্ম শুনে ভিক্ষুদের দর্শনেচ্ছায় বের হলেন।  কক্ষ হতে কক্ষান্তরে ভিক্ষু গণকে ভক্তি বন্দনা জানিয়ে তাদের কুশলা কুশল এবং কিছুর প্রয়োজন আছে কি না জিজ্ঞাসা করে করে চলছেন।  এক প্রকোষ্ঠে তিনি দেখলেন এক রুগ্ন ভিক্ষু শয্যা গত হয়ে আছেন।  রোগ যন্ত্রণায় তিনি কাতরাচ্ছেন।  তার বিশুদ্ধ পাংশু বদন দেখে দুঃখে ভারাক্রান্ত হলো সুপ্রিয়ার অন্তর।  এ অসহায় রুগ্ন ভিক্ষুকে তিনি বিনীত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন রোগের কথা।  রোগী রোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলেন।  শুনে, সুপ্রিয়ার কোমল প্রাণে বড়ো।  ব্যথা ও করুণার সঞ্চার হলো।  “ভন্তে, আপনার এ অবস্থায় কিছুর প্রয়োজন বা খেতে ইচ্ছা হলে দয়া করে আমায় বলুন।  আমি স্বেচ্ছায় আপনাকে এ প্রার্থনা জানাচ্ছি, নিঃসংকোচে আমায় বলুন।  তা আপনার।  চাওয়া নয় আমায় সেই ধর্মের সুযোগ দেওয়া মাত্র।  বলুন ভন্তে, কিসের প্রয়োজন আপনার?” জিজ্ঞাসা করলেন সুপ্রিয়া।

 

রুগ্ন ভিক্ষু বললেন, ক্ষীণস্বরে “জানি উপাসিকে, তোমার ত্যাগ ও সেবার কথা।  এটাও জানি তথাগতের সত্য ও অহিংসার বাণী তোমার মনো মন্দিরে আলোক সম্পাত করেছে।  জানি না রোগীর মনে কেন জাগে নানা কিছু খাবার সাধ।  আমার খুব ইচ্ছা হয়েছে এক বার মনের মতো করে মাংসের জুস পান করি।  যদি সম্ভব হয়, তাই দিও।” সুপ্রিয়া সানন্দে বললেন “নিশ্চয়ই দেবো ভন্তে আগামী কাল পূর্বাহ্নে তা আমি পাঠিয়ে দেবো। ” এ বলে উপাসিকা বাড়ী ফিরলেন।  অচিরাবতীর পর পারে ঘন মসীরেখা টানা গ্রাম খানির অন্তরালে সূর্য ডুবে গেল।  সন্ধ্যা এল ধীরে মহুরে শোকাতুরা নারীর মতো পৃথিবীর উপর দিয়ে নীরব চরণ ফেলে।  দেখতে দেখতে তার কালো উত্তরীয়ের আবরণে পৃথিবীর হাসি ভরা সুন্দর দীপ্ত মুখ খানা ঢেকে গেল।  আঁধারের কৃষ্ণ যব নিকায় ধরণীর রঙ্গমঞ্চের আলো হাসি শ্যামল রূপে অব লুপ্ত হয়ে গেল।

 

পুণ্য ভূমি শ্রাবস্তীর ঘরে ঘরে সাঁঝের প্রদীপ জ্বলে উঠেছে।  বিহারে বিহারে সান্ধ্যো পসনার মিলিত কণ্ঠের বন্দনা ধ্বনি সন্ধ্যার প্রশান্তিকে কাঁপিয়ে তুলল।  ব্যগ্র ও উদ্বেগ উদ্বেলিতা সুপ্রিয়াকে কিন্তু, এসবের কিছুই মুগ্ধ করতে পারল না।  ঘুরে ফিরে তাঁর মানস পটে ভেসে ওঠে অসহায় সে রুগ্ন ভিক্ষুর পান্ডুর মুখ, কোটরা গত চক্ষু।  একথা মনে পড়তেই করুণা মীর করণ হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।

 

এ নিয়ে কত কি তার মনে উদয় হয়, কত কিছু তিনি ভাবতে থাকেন।  তিনি ভাবেন “এ রুগ্ন ভিক্ষু ঈপ্সিত বস্তু তিনি যদি এখনি সম্মুখে ধরে দিতে পারতেন, এখন সায়হ্নে না হয়ে যদি সকাল হতো!” ইত্যাদি কত চিন্তা তাঁর।  এ সন্ধ্যা ও সকালের মধ্যে একটা মাত্র রাত্রি, তাঁর কাছে যেন একটি বৎসরের ব্যব ধান সৃষ্টি করেছে।  যত ক্ষণ না তিনি কথা দেওয়া রোগীর পথ্য যোগাড় করে দিতে পারেন, তত ক্ষণ তাঁর উদ্বিগ্ন প্রাণে স্বস্তির আশা নেই।

 

“ভগবান বুদ্ধের মুখে শুনেছি যে রোগীর সেবা করে, সে তথা গতকে সেবা করার মতো পুণ্যার্জন করে।  রোগীকে দান করলে, সে দান হয় সময়ো পযোগী দান, উপযুক্ত ক্ষেত্রে দান সৎ পুরুষের দান অর্থাৎ সৎ পুরুষেরাই এরূপ দান করে থাকেন।  আমার পরম সৌভাগ্য যে দান ও সেবা দুই পুণ্য কর্মেরই সুযোগ যেন অব্যাহত থাকে। ’ চিন্তুা করলেন সুপ্রিয়া।

 

সে রাত্রে তিনি স্বামীকে একথা শোনালেন।  শুনে, সুপ্রিয় খুবই সন্তোষ প্রকাশ করলেন এবং এরূপ সাধু সংকল্পের জন্য পত্নীকে প্রশংসা করে বললেন “ভালই করেছে প্রিয় রোগীর উপযুক্ত পথ্য দিয়ে সেবা করা বড়ই পুণ্যের কথা।  এ পুণ্যের ফল তোমাকে ভবিষ্যতে রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে।  রোগ হীন দেহ যে সুন্দর ও বলিষ্ঠ হয়।  ‘আরোগ্যা পরমা লাভা’ নীরোগতা পরম লাভ, এটা মহাকারুণিক বুদ্ধের উদাত্ত বাণী। ”

 

ধর্ম প্রাণ স্বামীর উৎসাহ বাণী সুপ্রিয়ার প্রাণে প্রবল উদ্দীপনার সঞ্চার করল।  স্বামীর প্রতিটি কথা তার অন্তরে সেবা ধর্মের পীযুষধারা বর্ষণ করল।  আনন্দাতিশয্যে বলে উঠলেন সুপ্রিয় “আমি এদিক দিয়ে নিজকে সৌভাগ্য বতী মনে করি যে, তোমার মতো সহ ধর্মী স্বামী লাভ করতে পেরেছি।  স্বামী যদি সহ ধর্মী হয়, আর স্ত্রী যদি হয় সহ ধর্মিনী, সে খানেই হয় স্বর্গ সুখ।  যে মিলনে তা হয়ে উঠে না সে মিলন, সে দাম্পত্য জীবন মধুময় না হয়, হয় বিষময়। ”

 

স্বামী সুপ্রিয় উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন “ঠিকই বলেছে সুপ্রিয়া। আমাদের মিলন, আমাদের দাম্পত্য জীবন নিশ্চয়ই মধুময়।  নিজেকে পরম ভাগ্যবান বলে মনে করছি, তোমায় পত্নী রূপে লাভ করতে পেরে।  খাদ্য ভোজ্য দানে জননীর মতো বাৎসল্যময়ী, আদর যত্নে বোনের ন্যায় প্রীতি ময়ী, সেবা কর্মে দাসী রূপিনী, শান্তি দায়িনী, ভালো বাসায় সখীর মতো আনন্দ দায়িনী, পুণ্য কর্মে উৎসাহ দায়িনী ও সহ ধর্মীনি যে পত্নীর মধ্যে একা ধারে এত গুণ বিদ্যমান, আচ্ছা তুমি বলো তো প্রিয়া, তেমন পত্নীর স্বামী হওয়া কি গৌরবের বিষয় নয়?”

 

কথা সত্য হলেও, শুনে সুপ্রিয়া লজ্জিতা হলেন।  লজ্জা জংড়িত স্বরে তিনি বললেন “খুবই তো প্রশংসা করলে দেখছি।  আমি যা করি, একান্ত করণীয় মনে করেই করি, আমার নারী ধর্ম বোধেই করি।  তাই বলে এতো প্রশংসা কেন? তুমি আমায় সত্যি স্নেহ কর, আদর কর তাই বলে প্রশংসাচ্ছলে আমায় লজ্জা দেওয়ায় তোমার সার্থ কতা কি? অনেক রাত্রি হয়েছে, এখন নিদ্রার সময়। ” এ বলে সুপ্রিয়া উঠে চলে গেলেন।

 

সুপ্রিয়ার যখন নিদ্রা ভাঙ্গল, তখন প্রভাত হয়েছে।  বিহঙ্গ কূলের কলকুজনে প্রাভাতিক প্রশান্তি কেঁপে উঠেছে।  বালার্ক কিরণের নয়ন মোহন সোনালী আভা পূর্ব দিকে রাঙিয়ে তুলেছে।  চার দিক আমোদিত করে তুলেছে অজস্র ফুটন্ত ফুলের গন্ধ।  পৃথিবীর বুকে আবার নতুন প্রাণ, নতুন উচ্ছাসের ঢেউ বয়ে চলেছে।  কিন্তু এ পৃথিবীরই জীব সুপ্রিয়ার এ প্রভাতী আনন্দকে ছাপিয়ে তুলেছে নির বলম্ব সেই রোগ ক্লিষ্ট ভিক্ষুর পান্ডুর মুখ।  “আজ যে সে রুগ্ন ভিক্ষুর মুখে তার পথ্য দিতে হবে। ” একথা মনে পড়তেই ধড়মড় করে তিনি শয্যা ছেড়ে উঠে পড়লেন।  তাড়া তাড়ি প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে এসে দাসীকে ডাক দিলেন “দাসী!”

 

“এই যে মা, আসছি। ” বলে দাসী এলে তার হাতে মুদ্রা দিয়ে সুপ্রিয়া বললেন “যা, আজ একটু সকাল সকাল বাজারে যা, আর এ মুদ্রা দিয়ে ভাল মাংস কিনে নিয়ে আয়।  দেখিস, দেরী করিস না যেন। ” আজ গৃহ কত্রীর এমন তাড়া হুড়ো দেখে দাসী আর কাল বিলম্ব না করে বাজারে চলে গেল।  অনেক ক্ষণ হলো, দাসী বাজার থেকে এখনও ফিরে এলো না।  ব্যাপার কি? এখনও যে দাসী এলো না, এর কারণ কি?” অতি উৎকণ্ঠিত চিত্তে চিন্তা করলেন সুপ্রিয়া।

 

বেলা যতই বাড়তে লাগল, তিনি ততই চিন্তা যুক্ত হলেন।  রুগ্ন ভিক্ষুর বিষাদ মলিন ছবি স্মৃতি পথে ভেসে উঠল, তার বুকের ভিতরটা শিউরে ওঠে।  সংক্ষুব্ধ মন কি যেন একটা অনিশ্চিত আতংকের বিভী ষিকায় চমকে ওঠে।  দাসী অনেক দেরীতে ফিরে এলো।  ওর সাড়া পেয়ে সুপ্রিয়া দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উৎফুল্ল হয়ে বললেন “এসেছিস, এতো দেরী হলো যে?” দাসীর হাতে মাংস না দেখে হঠাৎ চমকে উঠে বিমর্ষ মুখে জিজ্ঞাসা করলেন “কি রে, মাংস কই! খালি হাতে যে ফিরে এলি?”

 

দাসী কপালের ঘাম মুছে নিরাশ ও ভীতস্বরে বলল “আজ সারা শ্রাবস্তী শহর ঘুরে ফিরে কোথাও যে মাংসের খোজ পেলাম না মা! মাংসের দোকান আজ সবই বন্ধ।  ব্যাপার কি বুঝতে না পেরে এক জনকে জিজ্ঞাসা করলাম “মশাই, মাংসের দোকান আজ বন্ধ।  কেন?” লোকটা হঠাৎ অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে বলল “আজ যে উপোসথের দিন, তা কি তুমি জান না? কেন, উপোসথ দিনেও বুঝি মাংস খাবার লোভ সাম্লাতে পারলে না?” এ বলে লোকটা আমার দিকে কেমন যেন এক অবজ্ঞার তীব্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেল।  কী যে লজ্জা পেলাম মা, তা আর কি বললো। ”

 

দাসীর এমন অপ্রত্যাশিত উত্তরে সুপ্রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।  “সত্যিই তো, আজ যে উপোসথ! একথা তো আমার মোটেই মনে ছিলো না! আজ যে মাংস পাওয়া যাবে না, তবে উপায়? মাংসের জুস দিয়ে রোগীর মুখে পথ্য দেবো বলে কাল যে কথা দিয়ে এলাম! আহা, রোগষ্টি দুর্বল ভিক্ষু, তিনি কি পথ্যের আশায় আমার পথ পানে।  চেয়ে থাকবেন না?” একথা মনে পড়তেই সুপ্রিয়া শিউরে উঠলেন।  তার বুকটা যেন মুচড়ে চৌচির হয়ে ফেটে যেতে চায়।  হতাশা ও আতংকের প্রবলতায় তার দেহ খানা আচম্বিতে কেঁপে উঠল।  তাঁর পায়ে নীচে। পৃথিবী যেন সরে যেতে লাগল, চোখ অন্ধকার হয়ে এল, অমনি তিনি অস্ফুট কাতর ধ্বনি করে ভূপৃষ্ঠে বসে পড়লেন।

 

কর্ত্রী ঠাকুরাণীর এ অবস্থা দেখে দাসী বিস্ময়ে হত বাক হয়ে গেলো।  সে আজ অনেক দিন ধরেই এ বাড়ীতে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু মমতা ও সেবা পরায়ণা গৃহকত্রীর এমন ভাব তো কোনো দিন দেখে নি।  সে তাড়া তাড়ি ভীত কম্পিত হস্তে সন্ত পণে সুপ্রিয়াকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলল “সামান্য মাংসের অভাবে আপনি আজ এতো অস্থির হচ্ছেন কেন মা! উপোসথ দিনে তো আপনাদের মাংস খেতে দেখি নি? মাংসের জন্য আজ আপনার এতো ব্যাকুলতা কেন মা?”

 

দুঃখের প্রবল উচ্ছাস সুপ্রিয়ার সমস্ত অন্তরকে মথিত করে দীর্ঘ শ্বাস রূপে বের হয়ে গেল। হতাশাচ্ছন্ন কাতর কণ্ঠে তিনি বললেন “তুই আমার মর্মদাহের কথা কি বুঝবি দাসী? মাংস খেতে যে আমার সাধ হয়েছে তা নয়, তা যে রোগাতুর ভিক্ষুর পথ্যের জন্য।  তাকে মাংসের জুস দেবো বলে কাল কথা দিয়ে এসেছি।  তিনি কি জুস পাবার আশায় এখন সতৃষ্ণ নয়নে আমার প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকছেন না? মাংস পাবার ভুল ধারণায় আমি এ কি করলাম দাসী? এ জুস পথ্যের উপর যে তার মরা বাঁচা নির্ভর করে না, একথা কেমন করে বলি? এ পথ্য সেবনে হয়তঃ তিনি সুস্থ হয়ে নব জীবন লাভ করতে পারেন, অথবা এর অভাবে রোগক্লিষ্ট ক্ষীণ জীবন শিখাও চিরতরে নিভে যেতে পারে।  তা যদি হয় ঝি, এর চেয়ে দুঃখ সন্তাপের বিষয় আর কি হতে পারে?” এইকথা বলতেবলতে সুপ্রিয়ার চোখের দুকূল ছাপিয়ে অশ্রুবন্যানেমে এলো, নিশীথ রাতের দুঃখের বাদলধারার মতো।

 

সবিস্ময়ে দাসী বলল “মা, আজ যখন মাংস পাবার আর কোনো উপায় নেই, না হয় আজ আর রোগীর পথ্য নাইবা দিলেন, আগামীকাল দিলেই তো চলবে।  বলেন তো আমি গিয়ে ভিক্ষুকে তা বলে আসি। ” সুপ্রিয়ার চিন্তাচ্ছন্ন অপলক নেত্রে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।  দাসীর পানে মুখ না ফিরিয়ে সে অবস্থাতেই বললেন,

“অসম্ভব, এ যে হতে পারে না।

“কেন মা, হতে পারে না কেন?”

সুপ্রিয়া একটু বিরক্তির স্বরে বললেন “কেন হতে পারে না, এর কারণ তুই বুঝতে পারবি না দাসী।  আমার ব্যথা যে কোন খানে, তা তুই কি করে বুঝবি? এতে তার মাথা ঘামিয়ে ফল নেই।  যা, তোর কাজ তুই গিযে দেখগে। ” দাসী চলে গেল।  সুপ্রিয়া সেখানেই বসে আন মনে কি চিন্তা করলেন।  হঠাৎ তার অননে মির্থ্যোজ্জ্বল আভা ফুটে উঠল, মেঘ মুক্ত চাঁদের মতো।  ভাবী সাফল্যের উচ্ছা সময় এক প্রবল আবেগে তাঁর ব্যথিত বুক খানা তৃপ্তিতে যেন ভরে গেল।  অমন শোভন শ্রেষ্ঠ প্রাণ ঢালা সেবা ধর্মের সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হতে পারবে না।  বাসনা পরি তৃপ্তির দুর্নিবার আকাঙ্খা তার মনকে উদ্বেলিত করে তুললো।  সফল তার মৃদুল পবনে তাঁর মূচ্ছাহত আশা বীথিকার ডাল পালা গুলি মুকুলিত হয়ে ধীরে ধীরে আন্দোলিত হতে লাগল।  অকূল সমুদ্রের কোথায় কূল পেয়ে তার বুকখানা আনন্দে ভরে উঠল।  সুপ্রিয়া সেখান থেকে উঠে ধীরে ধীরে তার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করলেন।

 

তখন কোশল রাজ প্রসেনজিৎ ছিলেন শবন্তীর ভাগ্য নিয়ন্তা। ধার্মিক রাজার ধর্মানুশাসনে গৌরবোজ্জ্বল শ্ৰীসম্পদে শ্রাবস্তী সমুন্নতা।  প্রজা মন্ডলীর উপর নর পতির এ আদেশ ছিল যে “প্রতি মাসের দুই অষ্টমী ও অমাবস্যা পূর্ণিমা উপোসথ দিবসে আমার রাজ্যের কোথাও কেহ প্রাণীহত্যা করতে পারবে না।  এ আদেশ লংঘন কারীকে যথা বিধি কঠোর দন্ডে দন্ডিত হতে হবে। ”

 

ক্রমে বেলা যতই বেড়ে উঠল, সুপ্রিয়া ততই এক কঠোর দুঃসাধ্য সাধনের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন।  তাঁর দেওয়া প্রতি শ্রুতি তাঁকে রক্ষা করতে হবে।  এর জন্য উত্তেজনার বশে অথবা জন্মান্তরীণ সংস্কারের প্রবল আকর্ষণে, উপরন্ত হেতু নিমিত্ত উৎপন্ন হওয়ার দরুণ তাঁর এক বারও মনে পড়ল না যে নর মাংস নরের অখাদ্য।  বিশেষতঃ আর্যদের পক্ষে এটা বড়ই নিন্দনীয় ও দোষাবহ।

 

সুপ্রিয় এবার শয়ন প্রকোষ্ঠের দ্বার বন্ধ করলেন।  ঘর থেকে রৌপ্যময় এক খান থালা, ধারাল চচ্চকে এক খানা ছুরিকা এবং পরিস্কার এক টুকরা কাপড় নিয়ে পালংকের উপর বসলেন।  তার পর তাঁর উরুর কাপড় অপসারিত করলেন।  সম্মুখস্থ ছুরিকা নিয়ে অম্লান বদনে, অকম্পিত চিত্তে তাঁর যুবতী দেহের নিটোল স্নিগ্ধ সুন্দর মাংসল উরু প্রদেশে অবলীলা ক্রমে দ্রুত ছুরি চালনা করে পরিমাণ মতো মাংস কেটে নিয়ে থালায় রাখলেন।  সঙ্গে সঙ্গে রক্ত ধারা প্রবাহিত হয়ে সে স্থান রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল।  সুপ্রিয়া ক্ষিপ্রহস্তে সম্মুখস্তু ছিন্ন বস্ত্রে কর্তিত স্থান উত্তম রূপে বেঁধে দিলেন এবং ছুরিকা ও রক্ত মাখা বস্ত্রাদি এক পাশে সরিয়ে রেখে দ্বার খুলে দাসীকে আহ্বান করলেন দাসী!”

 

ডাক শুনে শশব্যস্ত দাসী এসে সম্মুখে দাঁড়াতেই সুপ্রিয়া নির্বিকার চিত্তে তাঁর হাতে মাংসের থালা তুলে দিয়ে বললেন “ভালো রূপে এ মাংসের জুস তৈয়ার করগে যা।  গতকাল আমি যে রুগ্ন ভিক্ষুকে জুস দেবার কথা বলে ছিলাম, এ জুস তাঁকেই দিয়ে আসবি।  দেরী করি না।  যেন, বেলা বারটার আগেই তাঁর পথ্য গ্রহণ করা চাই।  আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে, বলবি আমার অসুখ করেছে। ”

 

দাসী মাংস দেখে বিস্ময়া বিষ্ট হলো।  সন্দিগ্ধ চিত্তে সে জিজ্ঞাসা করল “এ যে টাটকা মাংস মা! কোথা থেকে এলো? এ মাংস কোথা পেলেন মা?” “তোর এত খোজে কাজ নেই দাসী, শীগ গির যা, ভালো করে জুস তৈরী করে নিয়ে যা, দেরী হলে ভিক্ষু পথ্য গ্রহণে বিমুখ হবেন। ” দাসী মাংস হস্তে নির্বাক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।  তার বাক শক্তি যেন লোপ পেয়েছে, চলৎ শক্তি যেন রহিত হয়ে গেছে।  সুপ্রিয়ার মনের গোপন কথা সে উপলব্ধি করল।  কি যেন কি একটা অনিশ্চিত অথচ সদ্য সংঘটিত আতংকের বিভীষিকায় সে শিউরে উঠল।

 

দাসী তখনও মাংস হস্তে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সুপ্রিয়া বিরক্তির স্বরে বললেন “কি, এখানো তুই দাঁড়িয়ে আছিস ঝি? সময় অতীত হলে, এ জুস যে আর কোনো কাজে আসবে না। ” সুপ্রিয়ার এ কথায় দাসীর যেন সম্বিৎ ফিরে এলো।  সে অসহামার মতো একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।

 

সদ্য কর্তিত ক্ষত স্থানের যন্ত্রণায় সুপ্রিয় আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে পালংকের উপর শুয়ে পড়লেন।  যন্ত্রণা তাঁর সামান্য নয়।  কাটার যন্ত্রণা কতো কঠোর, কী অসহ্য ব্যথা! অসীম সহিষ্ণুতার সাথে তিনি তা সহ্য করতে লাগলেন।  তিনি ভাবেন কেবল ত্রিরত্নের মহিমার কথা, আর্তের সেবার জন্য দিতে পেরেছেন আপন শরীরের মাংস কেটে, পরের সুখ পরের শান্তির জন্য নিজের দুঃখ যন্ত্রণাকে ডেকে এনেছেন।  ক্ষতি নেই এতে তাঁর সংকল্প সিদ্ধ হয়েছে, রক্ষা হয়েছে প্রতি শ্রুতি, পূর্ণ হয়েছে সেবা ধর্ম, জীবনের সাধনা।  এতেই তাঁর অপরিসীম তৃপ্তি, অনাবিল শান্তি।

 

দাসী যত সহসা পারল মাংসের জুস রান্না করে যথা সময়ে বিহারে নিয়ে গিয়ে রুগ্ন ভিক্ষুকে দিয়ে এলো।  সুপ্রিয়ার স্বামী যখন ঘরে ফিরলেন, তখন বেলা হবে প্রায় দশটা।  তিনি পত্নীর সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছায় সোজা রন্ধন শালায় চলে এলেন।  সেখানে তাঁকে না দেখে দাসীকে জিজ্ঞাসা করলেন “কঠাকুরাণী কোথায়?”

 

উত্তর হলা “তিনি শোবার ঘরেই শুয়ে আছেন?” স্বামী সুপ্রিয় “অসময়ে শুয়ে আছে কেন প্রিয়া!” বলতে বলতে সুপ্রিয়ার শোবার ঘরে ঢুকে পড়লেন।  ঢুকা মাত্রই এক প্রান্তে দেখতে পেলেন রক্তাক্ত কাপড় ও রক্ত মাখা ছুরিকা।  সম্মুখে সর্পদষ্ট ব্যক্তির মতো চমকে উঠে দুই পা পিছিয়ে গেলেন এবং সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন “সুপি এ কিসের রক্ত?” স্বামীর ভীতি বিহ্বল অবস্থা দেখে সুপ্রিয়া আপন যন্ত্রণার কথা ভুলে গেলেন।  তাঁর মুখে একটু মৃদুহাসি ফুটে উঠল।  বললেন তিনি আশ্বাস বাক্যে “রক্ত দেখে ভয় পেলে বুঝি? রক্ত মাংসের মানুষের রক্ত দেখে এতো ভয়! কোনো ভয় নেই, নিকটে এসো বলছি। ”

 

সুপ্রিয় যন্ত্র চালিতের মতো নির্বাক বিস্ময়ে গিয়ে পত্নীর পাশে বসলেন।  সুপ্রিয়া বলতে আরম্ভ করলেন “আজ যে উপোসথ দিবস, একথা আমার মোটেই মনে ছিল না।  আমি যে রুগ্ন ভিক্ষুকে মাংসের জুস দেবো বলে কাল কথা দিয়ে এসেছি, আজ উপোসথ হেতু আমার সে কথা নিস্ফলতায় পর্যবসিত হতে বসেছে।  আমার জীবন যায় যা তবুও আমার কথার যেন ব্যতি ক্রম না ঘটে; নিরবলম্ব অসহায়ের আশার জীবনে তো ছাই দিতে পারি না।  অন্য মাংসের অভাবে আমার উরমাংস কেটে দিয়ে, জুস করিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। ” পত্নীর এমন দারুন দুঃসাহসিক কার্যের কথা শুনে সুপ্রিয় শিউরে উঠলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এক অস্ফুট কাতরধ্বনি করে উঠলেন তিনি আর কথা বলতে পারলেন না, কেবল পত্নীর মুখ পানে চেয়ে রইলেন।  বিস্ময় দৃষ্টিতে।

 

সুপ্রিয়া স্বামীর এক খানা হাত ধরে বললেন “খুবই বিস্মিত হয়েছে, কেমন? সর্বত্যাগী বুদ্ধ পুত্রের সেবার জন্য নিজের সামান্য দেহ মাংস দান করতে পেরেছি বৈ তো নয় এতে বেশী আর কি করা হলো।  তুমি কি ভুলে গেছো প্রিয়, শিবিরাজ ত্যাগের মহিমা স্মরণ করে চক্ষু দান করে ছিলেন? নন্দিক ভ্রাতৃদ্বয় মায়ের জীবন রক্ষার জন্য আত্ম দান করে ছিলেন? ভুরিদত্ত শঙ্খপাল শীল রক্ষার জন্য দেহ  দান করেছিলেন? এরূপ আরো কতো আত্ম দানের লোমহর্ষক কাহিনীর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বিদ্যমান রয়েছে। এসব গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের সঙ্গে তুলনা করলে, আমার এ দান তো অতি অকিঞ্চিৎকর।  করুণাময় বুদ্ধ না বলেছেন লোকেরা শরীর রক্ষার জন্য ধন সম্পদ ত্যাগ করে, জীবন রক্ষার জন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ত্যাগ করে, ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি কিন্তু ধর্ম রক্ষার জন্য ধন সম্পদ, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, এমন কি জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করেন? ধর্মের জন্য জীবন ত্যাগের সুযোগ আমার এ জীবনে ঘটে কি না জানি না; তবে আজ যা করেছি, তজ্জন্য মনঃক্ষুন্ন না হয়ে, হর্ষোস্তু হবারই কথা। ”

 

তাঁর পর কিছু ক্ষণ উভয়েই নীরব।  সুপ্রিয় বিস্মিত অন্তরে চিন্তা করতে লাগলেন “সুপ্রিয় আমার চেয়ে অনেক উর্ধে; এরূপ ত্যাগ, এমন করুণা, এতো প্রগাঢ় শ্রদ্ধা দেখলাম জীবনে এই প্রথম। ” পত্নীর প্রতি তিনি এতো প্রসন্ন হলেন যে, তা ভাষায় ব্যক্ত করার নয়।  ভাবা বেগে তিনি বলে উঠলেন “প্রিয়া, তুমি মহীয়সী নারী! এতো দিন জান তাম তুমি শ্রদ্ধাবর্তী, উদার হৃদয়া, দান শীল ও সেবা পরায়ণা; কিন্তু এমন তোর ত্যাগ ও সেবার কথা তো আমি জান তাম না।  তোমার এ পুণ্যাবাদন আমায় দিয়েছে আলোকের সন্ধান।  মনশ্চক্ষে তোমায় যতই দর্শন করি ততই আমার অন্তরে তুমি প্রতি ভাত হও অসামান্যা মহিমাময়ী রূপে। ”

 

বাস্ত বিকই পত্নী সুপ্রিয়া যে এমন শ্রদ্ধাবতী ও ত্যাগ শীলা, তা সম্যক পরিচয় এত দিন তিনি পান নি; আজ কিন্তু, এমন জ্বলন্ত প্রমাণ পেয়ে তিনি বিস্ময় সাগরে মগ্ন হলেন।  এমন দেবী দুর্লভ পত্নীর জন্য তাঁর হৃদয়ে রচনা করলেন তিনি অতি সুন্দর, অতি সমুজ্জ্বল মহার্ঘ আসন। “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে” তাঁর এ সংসার, গৃহী জীবন অনুপম অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দে ভরে উঠল।  যেদিকে তার দৃষ্টি পড়ে, সেদিকই যেন মৈত্রী করুণার জোয়ার প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে।

 

সুপ্রিয়ার এ অসাধারণ কার্য সর্বজ্ঞ বুদ্ধের অগোচর রইল না।  এ নারী দেহের বেদনায় করুণা ঘন বুদ্ধের প্রাণ মহারণার উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল।  তিনি আর পারলেন না জেতবনে নিবিষ্ট মনে বসে থাকতে।  ভিক্ষা পাত্র হস্তে বের হয়ে পড়লেন সুপ্রিয়াদের গৃহ পানে।  আজ হঠাৎ ভগবানকে গৃহ দ্বারে দেখে সুপ্রিয় যে কি করবেন, তা তিনি সহসা ঠিক করে উঠতে পারলেন না।  দ্রুত সুপ্রিয়ার নিকট গিয়ে বললেন “প্রিয়, ভগবান বুদ্ধ আমাদের গৃহ দ্বারে স্বাগত। ”

 

এ কথা শুনে সুপ্রিয়া উত্তল হয়ে বললেন “ভগবান শুভাগত হয়েছেন এ আমাদের পরম সৌভাগ্য।  তাঁকে অভ্যর্থনা করে বসার আগে কি আমাকে এসে বলতে হয়? যাও শীগ্গির গিয়ে তার বসার আসন পেতে দাও, এখন তো আহারের সময় হয়েছে, আর কাল বিলম্ব না করে তাঁর আহারের বন্দোবস্ত করে দাও। ”

 

পত্নীর কথা শেষ না হতেই সুপ্রিয় বুদ্ধের অভ্যর্থনার জন্য দ্রুত ফিরে যাচ্ছেন; এমন সময সুপ্রিয় আবার পেছন থেকে একটু বড় করে ডেকে বললেন “ভগবান আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলো যে আমার শরীর আজ ভালো যাচ্ছে না। ” সুপ্রিয় গিয়ে বুদ্ধের জন্য যথা উপযুক্ত মহার্ঘ সুন্দর আসন পেতে দিলেন এবং পদ ধৌত করিয়ে দিয়ে তাঁর ভিক্ষা পাত্র গ্রহণ করলেন।  “সুপ্রিয়া কোথা গেলো, তাকে যে দেখছি না”

 

প্রত্যুত্তরে সুপ্রিয় বিনীত ভাবে বললেন “ভগবন তাঁর অসুখ, শরীর আজ ভালো যাচ্ছে না। ” “তাকে বলে যে, আমি তাঁর আগমন ইচ্ছা করছি; তাকে এখানে আসতে বলে। ” বুদ্ধের এ আদেশের উপর সুপ্রিয়ের আর কিছু বলার সাহস হলো না।  তিনি গিয়ে সুপ্রিয়াকে বললেন “ভগবান তোমায় ডাক ছেন। ” সুপ্রিয় বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন “তাঁকে বলোনি, আমার অসুখ হয়েছে?”

 

“তা তো প্রথমেই বলেছি, তবুও তোমায় ডাক ছেন তিনি।  একথা শুনেই সুপ্রিয়া চিন্তা করলেন “বুদ্ধ যে সর্বজ্ঞ সর্ব দর্শী, তাঁর অগোচরে কিছু করা তো সম্ভব নয়। ” তা মনে হতেই সুপ্রিয়া উৎফুল্ল হয়ে শয্যা ছেড়ে উঠে পড়লেন।  কি জানি কি রূপে তাঁর ক্ষত স্থানের বেদনা উপশম হয়ে গেল। তাঁর পর তিনি ধীর পদ সঞ্চালনে বিনীত ভাবে ভগবৎ সমীপে উপনীত হলেন।  করুণাময় তথাগত সুপ্রিয়ার প্রতি করুণা দৃষ্টি বিন্যস্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ক্ষত স্থান সম্পূর্ণ নিরাময়।  হয়ে ক্ষত চিহ্ন মুছে গেল।  কোনো প্রকার যন্ত্রণা বা অস্বস্তি আর অনুভূত হলো না।  তিনি মনে করতে পারলেন না যে মুহূর্ত পূর্বে তাঁর উরুতে অসহ্য বেদনা দায়ক তেমন কোনও প্রকার কিছু হয়ে ছিলো।

 

অনন্য সাধারণ বুদ্ধের এ মহানুভব দর্শনে স্বামী স্ত্রী উভয়েই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়লেন।  ক্ষণকাল পূর্বেও তারা চিন্তা করতে পারেন নি যে, সুপ্রিয়া এত সহসা এমন ভাবে আরোগ্য লাভ করবেন।  সমুদ্ধের এইরূপ অলোক সামান্য মহিমাপূর্ণ মহাশক্তি অনুভব করে ভক্তি বিস্ময়ে সুপ্রিয়ার তনুমন বিনত হয়ে পড়ল।  স্মিত হাস্যে তিনি মহামানবের চরণতলে লুটিয়ে পড়লেন।  ভগবান আশীর্বাদ করলেন “সুখী হও সুপ্রিয়া।” তাঁর পর মহাকারুণিক করুণা ঘন কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করছেন “উপাসিকে, তোমার কি অসুখ করেছিলো?”

 

“হ্যা ভগবন, আমার অসুখ করেছিল।  কিন্তু প্রভু, অমিতাভের অমিত প্রভাবে সে অসুখ এই মাত্র সম্পূর্ণ রূপে সেরে গেছে।  এখন আমি পূর্বের মতোই সুস্থ আছি। ” “তুমি রোগ মুক্ত হলে ভালো, কিন্তু সে রোগটা কোন ধরনের উপাসিকা?” সুপ্রিয়া সমস্ত কথা বুদ্ধকে প্রকাশ করে বললেন,  সুপ্রিয়া কথা শুনে বুদ্ধ এরূপ মন্তব্য করলেন “উপাসিকে তুমি বরো দুষ্কর কার্য কর করেছো।  মনুষের মাংস অভক্ষ্য। ” এই কথা বলে তিনি নীরব হলেন।

 

অতঃপর স্বামী স্ত্রী উভয়েই সুগতের ভিক্ষা পাত্রে আহার্য পরিবেশন করলেন।  তিনি আহারে প্রবৃত্ত হলেন। আহার কৃত্যের অবসানে দানের ফল বর্ণনা প্রসঙ্গে ধর্মো পদেশ প্রদান করে বুদ্ধ বিহারে প্রত্যাবৃত্ত হলেন।  মুনি পুঙ্গব বুদ্ধ বিহারে উপস্থিত হয়েই ভিক্ষু গণকে তাঁর নিকট সমবেত হতে আদেশ করলেন।  ভিক্ষুগণ অনতি বিলম্বে ভগবৎ সমীপে।  সমাগত হলে শাস্তা সেই রুগ্ন ভিক্ষুকে জিজ্ঞাসা করলেন “ভিক্ষু, আজ তোমার শরীর কেমন আছে?” “ভগবান, আজ একটু সুস্থ বোধ করছি।” আজ তুমি কি পথ্য গ্রহণ করেছো? রুগ্নভিক্ষু শঙ্কিত সংকোচে উত্তরকরলেন “মাংসেরজুস গ্রহণকরেছি ভগবান। ” “এইজুস তুমি কোথায়পেলে ভিক্ষু, কে তোমায়তা দান করলো?” “উপাসিকা সুপ্রিয়াকেই বলে ছিলাম তিনিই এ জুস পাঠিয়ে দিয়েছেন।” তুমি জিজ্ঞাসা করেছিলে কি এ কিসের জুস কোন মাংসের জুস?” “না ভগবান, আমি কিছুই জিজ্ঞাসা করিনি।  আমি জানি না, তা কোন মাংসের জুস। ”


একথা শুনে সুগত বললেন “জিজ্ঞাসা না করে তুমি বড়ো অবিবেচকের কাজই করেছো ভিক্ষু! তুমি কি জান, আজ তুমি উপাসিকা সুপ্রিয়ারই দেহের মাংস, তথা মনুষ্য মাংস খেয়েছো? ভিক্ষুদের পক্ষে মনুষ্য মাংস ভক্ষণ যে কতো গর্হিত কাজ, তা তোমরা নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারে। ” শস্তার মুখে একথা শোনা মাত্রই সে রোগ জীর্ণ ভিক্ষু দুষ্কৃত কর্মের এক ভয়াবহ আতংকে শিউরে উঠলেন এবং অস্ফুট এক কাতরধ্বনি করলেন। সে সঙ্গে পরিষদের সমস্ত ভিক্ষুর অন্তর বাহির বিষাদের কাল ছায়ায় ছেয়ে ফেলল।


সমুদ্ধ আবার বলে উঠলেন মেঘ মন্দ্র স্বরে “ভিক্ষু, তুমি জান না, বুদ্ধ শাসনে ভক্তি ও সেবা পরায়ণ এমন উপাসক উপাসিকা আছে, ভিক্ষু সংঘের জন্য তাঁরা করতে পারে না এমন কিছুই নেই।  সেবা ধর্মের জন্য তারা নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খন্ড খন্ড করে কেটে দিতে পারে।  এমন কি, আপন জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে। সুপ্রিয়ার নিকট মাংস চেয়ে তুমি বড়োই অন্যায় করেছে।  দানের প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধা ও আগ্রহ তিশয্যে সে বিস্মৃত হয়ে ছিল যে নরমাংস নরের অখাদ্য।  “ভিক্ষুগণ, আজ থেকে এ নিয়ম ও আদেশ বিধি বদ্ধ হলো যে কোন ভিক্ষু মনুষ্য মাংস খেতে পারবে না।  কোন ভিক্ষু মাংস যাচা করবে না নিষিদ্ধ মাংসও আহার করবে না।  যে কোনো অপরীক্ষিত ও অজিজ্ঞাসিত মাংস ভক্ষণও ভিক্ষুদের পক্ষে নিষিদ্ধ।

 

ভিক্ষুগণ, সুপ্রিয়া আজ অন্য মাংসের অভাবে আপন দেহের মাংস কেটে দিয়েছে।  প্রয়োজন হলে, সে আত্ম দানও করতে পারে।  তার এমন সেবা ও ত্যাগ সাধনা এক জন্ম দুই জন্মের পূর্বেকার নয়, পদুমোত্তর বুদ্ধের সময় কার সাধনা।  তার প্রার্থনা ছিল রোগীর সেবায় সে যেন অগ্র গণ্যা হতে পারে।  আজ পূর্ণতা লাভ করেছে তার সে প্রার্থনা।  সিদ্ধ হয়েছে সুপ্রিয়ার সাধনা।” সুপ্রিয়া কাহিনী সমাপ্ত। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url